দুর্গাপূজা: যশোরের পুটখালি মণ্ডপ সাজছে ২১০ প্রতিমায়

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সামনে রেখে যশোরের শার্শার পুটখালি সার্বজনিন পূজা মণ্ডপে ২১০টি প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 07:29 AM
Updated : 22 Sept 2019, 09:10 AM

ভারত সীমান্ত ঘেঁষা রাজগঞ্জ বাওড়ের ধারে পুটখালি সার্বজনিন পূজা মণ্ডপে ২১০টি প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন প্রতিমা শিল্পীরা বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

গত ১ জুলাই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন ভাস্কর বাসুদেব সরকার। এবার ২১০টি প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বলে জানান তারা।

মহাভারতের বিভিন্ন উপাখ্যানের মন্থোন, পঞ্চপাণ্ডবের স্বর্গে গমন, রাম লক্ষ্যণ সীতার বনবাস, চাঁদ সওদাগারের কাহিনীর সাথে এবার অষ্টসখী নিয়ে কৃষ্ণের নৌকা বিলাসের প্রতিকৃতি দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।

ইতোমধ্যে প্রতিমার প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। বাকি আছে সাজসজ্জা।

বাসুদেব বলেন, এ বছর তিনি বিভিন্ন এলাকায় ৫টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন। চারটি মণ্ডপের প্রতিটিতে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ৩০/৪৫ হাজার টাকা।

তার সহকারী হিসেবে কাজ করছেন সাধন সরকার, উত্তম সরকার,মদন সরকার ও বিশ্বনাথ সরকার। 

তিনি বলেন, “উপযুক্ত সহকারী ও কারিগরের পেয়েছি বলে মন ভোলানো প্রতিমা তৈরি সম্ভব হচ্ছে।”

প্রায় ২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি এই শিল্পী জানান, তার বাবা-দাদাও প্রতিমা তৈরি করতেন।

সারা বছর প্রতিমা তৈরির কাজ করে পাঁচজনের সংসার চালানো বাসুদেব বলেন, “দুর্গাপূজা এলে আমাদের কাজ বেড়ে যায়। এ সময় কর্মচারীদের বেতন দিয়েও আমাদের লাখ দুই টাকা আয় থাকে।”

সাধন সরকার বলেন, আড়াই মাস ধরে বাসুদেব দাদার সাথে সহযোগী হিসেবে এখানে আছি। সবাই মিলে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি। বিশ্রামের তেমন কোনো সময় না থাকলেও দেবতাদের কাজ করতে পেরে ভালোই লাগছে। 

বিশ্বনাথ সরকার বলেন, এত বড় মণ্ডপের কাজ এখানে ছাড়া অন্য কোথাও করিনি। তাই কাজে কোনো ক্লান্তি মনে হয় না। আশা করি, পূজা শুরুর আগে সব কাজ শেষ হবে আমাদের।

প্রায় ৮ লাখ টাকা বাজেটের পুটখালি মণ্ডপের সভাপতি দেবব্রত হালদার বলেন, “যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসবের আয়োজন আমরা করেছি।

অন্যবার থেকে এবার দর্শকদের আরও বেশি ভালো লাগবে জানিয়ে পুটখালি মণ্ডপের সেক্রেটারি পরিমল বিশ্বাস বলেন, “এ বছর ২১০টি প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

“এরমধ্যে থাকবে মানুষ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে! কার্তিক, গণেশ, নারদ এরা কীভাবে জন্ম নিল। নারায়ণ ব্রোহাও রূপ কীভাবে পেল। নারায়ণ চক্র পেলেন কীভাবে, তা আমরা তুলে ধরেছি।” 

প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি রয়েছে প্যান্ডেল ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার জন্য স্টেজের সাজসজ্জা।

প্রতিবারের মত এবারও সাজসজ্জার দায়িত্ব পাওয়া 'ভাই ভাই ডেকারেটর'এর হোসাইন আহম্মদ বলেন,পাঁচ দিন ধরে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে এ মণ্ডপের বাহ্যিক সাজসজ্জার জন্য।

শার্শা উপজেলায় এ বছর মোট ২৯টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বৈদ্যনাথ দাস।

তিনি বলেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক থাকছে।

“সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হচ্ছে।”

আগামী ৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু হবে। দেবীদুর্গা এ বছর ঘোড়ায় চড়ে আসবেন আর যাবেনও ঘোড়ায়। ৪ অক্টোবর থেকে ৮ অক্টোবর দুর্গাপূজা চলবে।