কালিহাতীর সাংসদ সোহেল হাজারীর বিরুদ্ধে মামলা

নানা অভিযোগে টাঙ্গাইলে-৪ আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নিজ দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2019, 05:51 PM
Updated : 1 July 2019, 05:58 PM

কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমান রোববার টাঙ্গাইল আদালতে কালিহাতীর এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগে মামলা করেন।

আদালত রোববার বাদীপক্ষের শুনানি গ্রহণ করলেও এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।

অভিযোগে বলা হয়, গত মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থনে বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় দখল করে নেওয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, সাংসদ হাসান ইমামের নির্দেশে তার অনুসারী মাহমুদুল হাসান ও সোহেল সরকার তালা ভেঙে ওই কার্যালয়ে দখল করেন। বিষয়টি বাদী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের লিখিতভাবে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৭ এপ্রিল সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী মোবাইল ফোনে বাদীকে ফোন করে গালাগাল করেন।

একই সঙ্গে বাদীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার হুমকি দেন এবং তার অনুগত লোকজন দিয়ে হামলা করে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

সাংসদ সোহেল হাজারীর এই হুমকি মুঠোফোনে রেকর্ড করা আছে বলেও দাবি করেন মোখলেছুর রহমান।

মোখলেছুর রহমানের আইনজীবী আবদুল করিম বলেন, আদালতে অভিযোগের পর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমিনুল ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধিতে বাদীর জবানবন্দি নিয়েছেন এবং আইনজীবীরও শুনানি গ্রহণ করেছেন। পরবর্তী যেকোনো সময়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

মোখলেছ আদালত প্রাঙ্গণে সংবাদকর্মীদের বলেন, “আমারে তো হুমকি দিছে! উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদ তোতা আর আমিনূল ইসলাম আমিনকে এমপি হাজারীর বাহিনী কোপাইয়া আহত করছে।” 

অপরদিকে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি  ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ তোতা অভিযোগ করেন, “এই এমপি হাজারীই আমারে তার সন্ত্রাসী দিয়া মারাইছে, মুখলেছরে তো খালি হুমকি দিছে। মামলা করছি কোনো লাভ দেখতাছি না। তাই আমাগো মায়ের কাছে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) গেছিলাম অভিযোগ বইলা আইছি।”

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদ আমিনুল ইসলাম আমিনের মুখ থেকেও শোনা গেছে একই ধরনের অভিযোগ।

তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করি, আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম ঠান্ডুর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে সোহেল হাজারী তার সন্ত্রাসীদের দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছিল। আমি মামলা করেও কোনো ফল পাইনি।”

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, “মোখলেছকে আমি কাজ করার জন্য প্রকল্প দিয়েছিলাম। সে ওই প্রকল্পের কাজ না করে

টাকা নিজের পকেটে রাখে এবং আদম ব্যবসার নামে এলাকার বেশকয়েকটি পরিবারকে পথে নামিয়েছে। ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলাও করেছে শুনেছি।

“কালিহাতী তথা দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেখলে আমি অভিভাবক হিসেবে ধমক ও শাসন করতেই পারি। এতে যদি কেউ আদালতে আমার নামে মামলা করে তাতে আমার কিছুই করার নাই।”

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মহমুদুল হাসান দিপুল ও ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান তুহিন বলেন, মোখলে এক সময় এলাকায় ডাকাতি করত। এর জন্য তিনি জেল খেটেছিলেন। তাছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে আদম ব্যবসা করে ২০ থেকে ২৫টি পরিবারকে পথে বসিয়েছেন।

হাসান ইমাম খান টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সাংসদ। এ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করায় ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত হন ও দল থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করার পর উপনির্বাচনে হাসান ইমাম খান সাংসদ নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাংসদ হন।