তবে হাওরে আবাদ হওয়া বোরো ধান কাটার কাজ আগেই ‘প্রায় শেষ’ হয়ে যাওয়ায় ফসলের খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছে না জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে উঠে আসার পর শনিবার বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করে। এরপর তার বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পরিণত হয় স্থল নিম্নচাপে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশ পেরিয়ে গিয়ে লঘুচাপে পরিণত হওয়া ফণী এখন অবস্থান করছে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলে বৃষ্টির কারণে সিলেট ও নেত্রকোণা অঞ্চলের তিনটি নদীর পানি রোববার বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছিল।
এর মধ্যে কংস নদী জারিয়া-ঝাঞ্জাইল পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬৪ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা নদী লরেরগড় পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার এবং সোমেশ্বরী নদী কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার বইছিল।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি সমতল আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। পরে তা স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে।
একই সময়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের জিরাক তাহিরপুর ও চাতল পয়েন্টের ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে। এতে শুকানোর জন্য রাখা ধান ও গবাদিপশুর খাদ্য পানিতে তলিয়ে যায়। বেশ কিছু ফসলি জমিও পানিতে তলিয়ে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. বশির আহম্মদ বলেছেন, “জেলায় ফসল কাটা প্রায় শেষ, এখন কৃষকরা ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত, হাওরে পানি প্রবেশের কারণে বড় ক্ষতি হয়নি ফসলের।”
তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারও কারও শুকানোর জন্য রাখা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। খড় ভেসে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও তারা চিন্তিত।
খরচার হাওরের কৃষক আলী আমজাদ বলেন, “রাতে খলায় (হাওয়রের ভেতরে ধান শুকানোর জন্য তৈরি করা সমতল মাঠ) ধান রেখে আসছিলাম। সকালে উঠে দেখি ঢলের পানিতে ধান তলিয়ে গেছে।”
জিরাক তাহিরপুরের কিষাণী আফছেরা বেগম বলেন, এ বছর গরুরে কী খানি দিমু বুঝতাছি না, সব খেড় (খড়) পানিতে তলাইয়া গেছে। এখন পচা খেড় পানি তাইকা তুলার চেষ্টা করতাছি।”
একই এলাকার কৃষক সবুর হোসেন বলেন, হঠাৎ পানি আসায় সড়কের পাশের ধানি জমিতে পানি উঠে গেছে, এখন নৌকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম বলেন, “তিনটি হাওরে পানি প্রবেশ করলেও ফসলের ক্ষতি তেমন হয়নি, কারণ তার আগেই এসব হাওরে ধান কেটে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে জামালগঞ্জ উপজেলায় ৯৬ ভাগ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৯৫ ভাগ ধান কেটে ফেলা হয়েছে।”
ফণীর প্রভাবে টানা দুই দিনে ভারী বর্ষণে নেত্রকোণার নদ -নদীর পানির উচ্চতাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলামবলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।