বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2019, 05:02 PM
Updated : 6 April 2019, 05:11 PM

বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ওই দুই ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।

এ ব্যাপারে ওই দুই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিযেছেন। তবে এক মাস পার হলেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ অবস্থায় ওই দুই ছাত্রী তাদের পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন।

এক ছাত্রী ছয় পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান আক্কাস আলী তার থিসিসের সুপারভাইজার। তার তত্ত্বাবধানে তারা তিন ছাত্রী একটি গ্রুপ করে কাজ শুরু করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থিসিসের কথা বলে ওই শিক্ষক তাদের প্রায়ই তার কক্ষে ডেকে নিতেন।

“এ সময় থিসিসে নম্বর বাড়ানোর কথা বলে আমাকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন ও নানাভাবে যৌন হয়রানি করেছেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন।”

তিনি বলেন, “আক্কাস আলী আমাকে থিসিসের কাজ আছে বলে একা বিভাগে ডেকে নেন। এক পর্যায়ে তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন। এতে বাধা দিলে আমাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। আর রাজি হলে থিসিসে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখান।”

এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরিয়ে যান এবং পরে তিনি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। পরে শিক্ষকদের পরামর্শে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান।

হয়রানির শিকার অপর ছাত্রী সাত পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। কিন্তু আক্কাস আলী তাকে ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। থিসিসের কাজ শেষ করে ২৪ জানুয়ারি তারা তিনজন তার সঙ্গে দেখা করেন।

“চলে আসার সময় তিনি আমাকে সেখানে থাকতে বলেন। গলার স্বর নিচু করে পরের দিন শুক্রবার তিনি আমাকে তার সঙ্গে একা দেখা করতে বলেন।”

এভাবে থিসিসের কথা বলে কারণে অকারণে ডেকে নিয়ে ওই শিক্ষক নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ দুই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি তাদের গবেষণার কাজ শেষ করে দেখানো হয়। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে সন্তুষ্ট করা যায়নি। সুযোগ বুঝে ওই শিক্ষক তাদের একজনকে পরদিন একা দেখা করতে বলেন। পরে ওই ছাত্রী  মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি পরীক্ষা দিয়েই তারা গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন।

এখনও তারা পরীক্ষার ফলাফল পাননি। ফলাফল নিয়েও তারা এখনো শঙ্কিত বলে জানান।

এদিকে, ওই শিক্ষক ফোন করে তাদের সরাসরি এসে দেখা করতে বলছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।  

অভিযোগকারী এক ছাত্রী বলেন, “আমরা লিখিত অভিযোগ আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের দিয়েছি এবং তাদের সবকিছু বলেছি। এছাড়াও অভিযোগ জানাতে আমরা অভিভাবকসহ উপাচার্যের সাথে দেখা করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমাদের সাথে সাক্ষাৎ দেননি।

“এছাড়া ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা খাতুন এ বিষয়ে তদন্ত করেছিলেন বলে শুনেছি।”

ইটিই বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা খাতুন তদন্তের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, “এ ব্যাপারে আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে ওই শিক্ষার্থী। আমার পেশাগত ব্যস্ততা থাকায় এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানতে পারিনি। আমার মাধ্যমে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।”

এ ব্যাপারে আক্কাছ আলী বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই দুই ছাত্রীসহ আরও অনেকে গবেষণার জন্য একসাথে কাজ করেছেন। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ প্রক্টর অফিসে দায়ের করা হয়নি। এ কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই।”

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ওই ছাত্রী দুই মাস আগে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চলে গেছে। সে আক্কাস আলীর ব্যাপারে লিখিত আবেদন করেছিল।

“এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি। আক্কাস শুক্র ও শনিবার কোনো ছাত্রীকে কখনোই ডাকতে পারবে না বলে অঙ্গীকারনামা নিয়েছি। পাশাপাশি কোনো পরীক্ষা বা থিসিসে কোনো ছাত্রীকে রাখতে পারবেন না এই মর্মেও তার কাছ থেকে লিখিত নিয়েছি।”