চার দশকের শত্রুতা ভুলে বন্ধুত্বের মেলায় খিদিরপুরবাসী

আধিপত্য বিস্তার ও জমির বিরোধসহ বিভিন্ন ঘটনায় খুনোখুনির পর শত্রুতা ভুলে বন্ধু হবার প্রতিজ্ঞা করেছে নেত্রকোণার খিদিরপুর গ্রামের লোকজন।

লাভলু পাল চৌধুরী নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2019, 07:23 AM
Updated : 21 March 2019, 07:52 AM

কয়েক মাস ধরে আলোচনা ও বৈঠকের পর এ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তারা এক গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেন।

সান্ধিকোণা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, “গ্রামটিতে প্রায়ই মারামারি বাধে। গত চার দশকে অন্তত ১০ জন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে পাল্টাপাল্টি হামলায় খুন হন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শামসু মিয়া ও মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি। এরপর আরও সংঘর্ষ, বাড়ি-ঘর পোড়ানো, লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

“গ্রামের প্রায় সব মানুষ বিভিন্ন মামলার আসামি। হামলা-পাল্টা-হামলায় বহু মানুষ আহত। আদালত আর হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে সবাই নাস্তানাবুদ।”

এই পরিস্থিতিতে গ্রামের কতিপয় মুরব্বি ক্ষমার কথা বলে, তিক্ততা ভুলে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে তাতে সাড়া পড়ে।

সিরাজুল বলেন, গত ডিসেম্বর প্রথম বৈঠক হয় গ্রামের হক মিয়ার বাড়িতে। এ বাড়িতে তিন দফা বৈঠক হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মুসলেম উদ্দিনের বাড়িতে শেষ বৈঠক হয় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি।

এসব বৈঠকে সান্ধিকোণা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ভুঁইয়া শন্তি, মোজাফরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজুল বলেন, “বৈঠকে সব পক্ষ ঐক্যমত্যে পৌঁছায় যে তারা মামলাগুলো তুলে নেবেন অথবা মামলা নিয়ে কেউ আর অর্থ ব্যয় করবেন না। মামলায় প্রতিপক্ষের যেন শাস্তি না হয় সে চেষ্টা করবেন।”

এছাড়া গ্রামের মানুষজন পরস্পরের প্রতি সহনশীল হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। সিরাজুল ইসলাম এই শান্তি উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন।

গ্রামের তরুণ মহসিন খান বলেন, “২০১৪ সালে আমার বাবা খুন হন। এ ঘটনায় মামলা-মোকদ্দমায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। তবু শান্তি উদ্যোগে সাড়া দিয়েছি। হিংসায় ক্ষতি ছাড়া ভাল কিছু হয় না দেখেছি। এখন গ্রামের সব পক্ষের সঙ্গে মিলেমিশে দিন কাটাতে চাই।”

গ্রামে শান্তি-সৌহার্দ্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য তারা মঙ্গলবার এক গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেন।

মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি স্কুলশিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা আর হানাহানি চাই না। ক্রীড়া উৎসবে শান্তির বাণীতে গ্রামের সব মানুষ উদ্বেলিত, খুশি।”

উৎসবে দাঁড়িয়াবান্ধ, কলাগাছে ওঠা, পাঁচ কিলোমিটার দৌড়, চেয়ার দখলসহ ২৩ ধরনের খেলায় নারী-পুরুষসহ শিশুরাও অংশ নেয় বলে জানান গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন।

খেলায় বিজয়দের পুরস্কার দেওয়া হয়।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, “গ্রামটিতে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। গ্রামবাসী ও আশপাশের মানুষ মিলে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে বৈঠক করে আপস-মীমাংসায় আসেন।

“আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।এই গ্রামে ভবিষ্যতে আর বিবাদ বাধবে না বলে আশা করি।”

এই শান্তি উদ্যোগের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রতি শুভকামনা জানান ইউএনও।