ফাল্গুনের শিলা-ঝড়, ক্ষতির মুখে রবিশস্য

বসন্তের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড় ও প্রবল শিলাবৃষ্টিতে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে গেছে গাছপালা, ঘরবাড়ি। ঝরে গেছে আমের মুকুল।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিরাজশাহী, কুষ্টিয়া ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2019, 04:32 PM
Updated : 17 Feb 2019, 04:49 PM

রোববার ভোরের এই তাণ্ডবে রাজশাহীর পুঠিয়া, গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ব্যাপকভাবে আমের মুকুল ঝরে গেছে। শিলা ও ভারি বৃষ্টিতে পেঁয়াজ, রসুন, গমসহ নানা ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহু গাছ ভেঙে পড়েছে।

কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজ, রসুন. ভুট্টা, গম, ডালবীজ ও তেলবীজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় অনেক কাঁচা ও আধাকাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

তবে আমের মুকুল ঝরে পড়ায় ফলনের ক্ষতি হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

রাজশাহী

ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও শিলার স্তূপ জমে ছিল। পুঠিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টির আঘাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে প্রচুর মুকুল ঝরে পড়েছে।

অনেক কলা ও পেঁপে বাগান নুয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছের ডালপালা। ঝরে পড়েছে অসংখ্য মুকুল।

পুঠিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টির কারণে বরফের স্তূপ জমে যায়। সকাল ৮টা পর্যন্ত এমন বরফের স্তূপ দেখা গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এমন বরফের স্তূপ তারা আগে দেখেননি। বিপুল পরিমাণ গাছের ডালপালাও ভেঙে গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের আকাশ ছোঁয়া অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ায় বন্ধু হয়ে যায় চলাচলের পথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রাস্তার সামনের অনেক গাছ ভেঙে পড়ে গেছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ভোরে ৩৮ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। আর বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী আবার এমন বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান নজরুল ইসলাম।

পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার আমের গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল; কিন্তু ভোরে শিলাবৃষ্টির আঘাতে প্রচুর মুকুল ঝরে পড়েছে। এতে লোকসান গুণতে হবে।

“শিলাবৃষ্টিতে অন্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, আম গাছে মুকুল যে পরিমাণ এসেছিল তাতে অন্যান্য বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো; কিন্তু বসন্তের শুরুতেই শিলাবৃষ্টিতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

আমের উৎপাদন কেমন হবে তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, শিলা ও ভারি বৃষ্টি কারণে পেঁয়াজ, রসুন, গম ও আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। জেলায় দুই হাজার ১৮২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পুঠিয়া উপজেলায়।

তবে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল আলীম বলছেন, আমের মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, আম হলো বৈরি আবহাওয়ার ফসল। ঝড়, বৃষ্টির মধ্যেই আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

এবার আমের উৎপাদন ভালো হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে জানিয়ে আলীম বলেন, “এবার প্রচুর মুকুল এসেছে। অতো মুকুলে শেষ পর্যন্ত আম ধরে না। আবার ধরলেও গাছে থাকে না। ঝরে পড়ে। এবার শিলার কারণে অনেক মুকুল ঝরলেও বৃষ্টি গাছের মুকুলগুলোর জন্য ভালো হয়েছে।

তাই আমের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যাবে বলেই মনে করেন এই গবেষক।

নেত্রকোণা

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় ঝড়ে ৩৮টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো ফসলের জমি। উপড়ে গেছে বহু গাছপালা।

ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে উপজেলার দলপা ও আশুজিয়া ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, “রোববার ভোরে ঝড়ে কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের দলপা ও রামনগর গ্রামের ৩৮টি কাঁচা ও আধাকাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।”

কেন্দুয়া থানার ওসি  ইমারত হোসেন গাজী বলেন, এছাড়া উপজেলার দলপা ও আশুজিয়া ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

“উপড়ে বহু গাছপালা ভেঙ্গে গেছে।দলপা ও আশুজিয়া ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।”

দুপুরে ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। পরে তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের  ঘর তৈরির টিনসহ নগদ টাকা দেওয়া হবে।

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখি ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে শিলাবৃষ্টিতে কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। তারা অনেকেই নিজের জমি ছাড়াও বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে লিজকৃত জমিতে এসব ফসল চাষ করেছিল।

“এখন আমও গেল ছালাও গেল। এসব ক্ষতির বোঝা বইতে অধিকাংশ কৃষককেই ধারকর্জ করতে হবে।”

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, আক্রান্ত এলাকায় অন্তত ৩০ হেক্টর কৃষি জমির পেঁয়াজ, রশুন. ভুট্টা, গম, ডালবীজ ও তেলবীজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে।