মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে  ‘বাঁচাতে গিয়ে’ নিহত তারা

খুলনায় ট্রাকের মুখোমুখি হওয়া প্রাইভেটকারটি মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে; দুর্ঘটনায় যুব ও ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা প্রাণ হারিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিখুলনা প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2019, 06:48 AM
Updated : 11 Feb 2019, 02:27 PM

নগরীর রূপসা সেতুর বাইপাস সড়কে খেজুর বাগান এলাকায় রোববার রাতে ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজন গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগ ও একজন ছাত্রলীগ নেতা।

নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের সবুজবাগের আবদুল ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে ও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব হাসান বাবু, একই এলাকার আলাউদ্দিন শিকদারের ছেলে ও গোপালগঞ্জ সদর যুবলীগের সহ-সভাপতি সাদিকুল আলম, থানাপাড়ার গাজী মিজানুর রহমানের ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক ওয়ালিদ মাহমুদ উৎসব, গেটপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন মোল্লার ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাজু আহমেদ এবং চাঁদমারী এলাকার ওয়াহিদ গাজীর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম গাজী।

সাদিকুল ছাড়া বাকি সবাই গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী বলে পুলিশ জানিয়েছে।  

নিহতদের স্বজনরা জানান, তারা পাঁচজন বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন। মাদকবিরোধী সংগঠনেও সক্রিয় ছিলেন। রোববার তারা একটি প্রাইভেটকারে করে খুলনা বেড়াতে গিয়েছিলেন।

খুলনা নগরীর লবণচরা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারটি খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ ফেরার পথে সাদিকুল চালকের আসনে ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে শফিকুল বলেন, রাত ১১টার দিকে খেজুর বাগান অতিক্রম করার সময় ‘মানসিক ভারসাম্যহীন এক ভবঘুরে’ প্রাইভেট কারের সামনে এসে পড়ে।

“এ সময় চালক তাকে বাঁচাতে গেলে বিপরীতমুখী মংলা থেকে জিরো পয়েন্টগামী সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেটকারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।”

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে বলে ওসি জানান।   

তিনি জানান, ট্রাকটি জব্দ করা হলেও চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে।

এদিকে নিহত পাঁচ জনের লাশ সোমবার সকালে গোপালগঞ্জে বাড়িতে এসে পৌঁছালে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

গোপালগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে; নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।  

গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্বজন, প্রতিবেশীরা হিতদের বাড়িতে ছুটে যান। বাদ জোহর গোপালগঞ্জে শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে নামাজে জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়েছে।  

গোপালগঞ্জে সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ মাহামুদ বাপ্পী বলেন, “তাজা পাঁচটি প্রাণ ঝড়েছে। এরা আমাদের স্বজন। তাই শোকে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তাদের মৃত্যুতে এখানে ছাত্র-যুবলীগে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।”

গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, পাঁচ ছাত্র-যুবলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিল। তাদের মধ্যে দেশ ও জাতির জন্য অনেক কিছু করার সোনালী স্বপ্ন ছিল; মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে।

“এ শোক বহন করার শক্তি আমাদের নেই। তারপরও শোক সন্তপ্ত পরিবারগুলোকে আওয়ামী লীগ ও গোপালগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাই।”

তিনি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।