মঙ্গলবার নীলফামারীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাহিদ হাসানের আদালতে নৈশ প্রহরী আব্দুর রাজ্জাক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
রাতে সৈয়দপুর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল।
সংবাদ সম্মেলনে অশোক কুমার বলেন, ঘটনার পর থেকে আব্দুর রাজ্জাক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করলে বিকালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূল জবানবন্দি গ্রহণের জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।”
“খামারে থাকা ভেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ভেড়ার দাম তার বেতনের টাকা থেকে কেটে নিত। স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি চাইলে তারা ছুটি দিত না। ছোটোখাটো দোষ হলেই আব্দুর রাজ্জাকে মারধর করা হতো।”
অশোক বলেন, ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে খামারের মালিক নজরুল ইসলামের কাছে সাতদিন ছুটি চেয়েছিলেন রাজ্জাক; কিন্তু খামারের মালিকের স্ত্রী সালমা বেগম লাঠি দিয়ে পেটান রাজ্জাককে। ওই রাতেই খামারের ভেড়ার পালে একটি ভেড়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় খামারের মালিকের স্ত্রী সালমা বেগম অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ লাঠি দিয়ে আঘাত করে রাজ্জাককে।
“এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র সালমা বেগমকে আঘাত করে আব্দুর রাজ্জাক। সালমা বেগমের চিৎকারে নজরুল আরেকটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আব্দুর রাজ্জাকে আঘাত কররে। এ সময় আব্দুর রাজ্জাক তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে নজরুল ও তার স্ত্রীকে এলোপাথারি কোপ দেন।”
পরে স্বামী-স্ত্রীর গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন বলে পুলিশকে আব্দুর রাজ্জাক জানান, বলেন অশোক।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দপুর থানার পরির্দশক শাহজাহান পাশা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দপুর থানার ওসি শাহজাহান পাশা জানান, গত ২৭ জানুয়ারি ভোর রাতে সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালুবাড়ি গ্রামে নিজের খামার বাড়িতে খামার মালিক শেখ নজরুল ইসলাম (৬০) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে (৪৮) কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ সময় আহত হন ওই খামের নৈশপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাক।
“খবর পেয়ে পুলিশ দম্পতির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আহত নৈশপ্রহরীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।”
খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে নৈশপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাকসহ চার জনের নাম উল্লেখ করে ঘটনার পরদিন সৈয়দপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত দম্পতির ছেলে বড় ছেলে সোহেল রানা।