ত্রিশালে ভেঙে ফেলা ‘হিটলার ব্রিকস’ দুই মাসের মধ্যে ফের চালু

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভেঙে ফেলা ইটভাটা ‘হিটলার ব্রিকস’ দুই মাস না পেরোতেই নতুন করে ইট পোড়ানো শুরু করেছে।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2019, 06:00 AM
Updated : 20 Jan 2019, 06:00 AM

অবৈধভাবে নির্মিত ওই ইটভাটার একটি অংশ গতবছর ২৭ নভেম্বর গুঁড়িয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কিন্তু এরপর নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে ভেঙে ফেলা অংশটুকু মেরামত করে নতুন করে ভাটা চালু করে মালিকপক্ষ।

তাদের দাবি, জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই সেখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে কোনো অনুমতি তারা দেননি।

ত্রিশাল উপজেলার বইলর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে ১০ একর কৃষি জমির ওপর ‘হিটলার ব্রিকস’ নামের ওই ইটভাটা গড়ে তোলা হয় ২০১৮ সালের শুরুর দিকে।

স্থানীয় প্রভাবশালী নিজাম উদ্দিন সেলিম ও বজলুর রহমান সুজন ‘জোর জবরধস্তি’ করে কৃষি জমির দখলে নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই ওই ভাটা নির্মাণ করেন বলে সে সময় অভিযোগ ওঠে।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ২০১৮ সালের মার্চে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল।

সেখানে বলা হয়, ২০১৩ সালের ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন’ (নিয়ন্ত্রণ) আইনে কৃষি জমিতে ইট ভাটা করার সুযোগ নেই। তাছাড়া ওই ভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ওই ভাটার আশপাশে প্রায় ১৫ একর জমিতে তিন মৌসুমেই ধান উৎপাদন হত। কিন্তু সেলিম ও সুজন ওই জমি দখলে নিয়ে ভাটা নির্মাণ শুরু করেন।

সে সময় জমির মালিক হামেদ আলীর লোকজনের সঙ্গে ভাটার মালিকপক্ষের সংঘর্ষও হয়। ওই ঘটনায় হিটলার ব্রিকসের মালিকদের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় মামলাও করেন হামেদ আলী।

এই পরিস্থিতিতে ইউএনও আবদুল্লাহ আল জাকির ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরশাদ উদ্দিন সেখানে ভাটা নির্মাণ বন্ধের জন্য কয়েক দফা নির্দেশ দিলেও মালিকপক্ষ তা কানে তোলেনি।

এরপর গতবছর ২৭ নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরশাদ উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ভাটার একটি অংশ ভেঙে দেন।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর আলম, সহকারী উপ-পরিচালক সাবিকুন নাহার এবং ত্রিশাল থানা পুলিশ ওই অভিযানে অংশ নেয়।

কিন্তু এক মাস পার না হতেই ভাটা পুনঃনির্মাণ শুরু করে মালিকপক্ষ। ভাঙা অংশ মেরামত করে সেখানে ইট পোড়ানোও শুরু হয়।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হিটলার ইটভাটার অন্যতম মালিক বজলুর রহমান সুজন বলেন, ভাটার ভাঙা অংশ সংস্কার করতে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে তাদের।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। তবে অনুমোদনের কাগজপত্র এখনও পাইনি, সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে।” 

তবে হিটলার ইটভাটার কোনো ধরনের অনুমোদন নেই জানিয়ে ত্রিশালের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোয়েব আহমেদ বলেন, “একটি ইটভাটা নির্মাণ করতে ৫ ধাপে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হিটলার ইটভাটার একটি ধাপেরও অনুমোদন নেই।”

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ওই ভাটার আশপাশে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েকশ হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে। ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, স্থানীয় বাসিন্দা, গবাদি পশু ও ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ভেঙে ফেলার পর আবার কীভাবে ভাটা চালু হল জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর আলম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “হিটলার ইটভাটা চালুর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তাদেরকে তো কোনো অনুমতি বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।” 

আর ইউএনও আব্দুল্লাহ আল জাকির বলেন, নির্বাচনের সময় এসব দিকে প্রশাসনের নজর কম ছিল। এই সুযোগে ইটভাটার ভেঙে ফেলা অংশটুকু মেরামত করে ফেলেছে মালিকপক্ষ।

হিটলার ইটভাটাসহ সকল অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ‘হিটলার ব্রিকস’ এর দুই মালিক নিজাম উদ্দিন সেলিম ও বজলুর রহমান সুজন দীর্ঘদিন ইতালি ছিলেন। সেখান থেকে বেশ কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে তারা ব্যবসা শুরু করেন।

বিত্তশালী হিসেবে পরিচিতি থাকায় উপজেলায় তাদের বেশ প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশের সঙ্গে সখ্য থাকায় প্রশাসন তাদের বাগে আনতে পারছে না বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।