না’গঞ্জে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ তদন্তে কমিটি, মামলা দায়ের

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আসামি ধরতে গিয়ে হামলা ও জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2019, 02:25 PM
Updated : 13 Jan 2019, 02:25 PM

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, এই ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ মামুন আব্দুল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশে এসআই মোহাস্মদ আলী বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।” 

পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বন্দর থানার ওসি আজহারুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

শনিবার রাতে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। ওই সময় আসামিপক্ষের লোকজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন।

নিহত আশিকুর রহমান মদনপুর চানপুর এলাকার মতিন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া শহীদুল ইসলামের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কুলাঘাট এলাকায়।

তিনি সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া এলাকার ‘প্যাডেক্স’ নামের পোশাক কারখানায় কাটিং সেকশনে কাজ করতেন।  

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিহতের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এসপি জানিয়েছেন।  

স্থানীয়রা জানান, মদনপুর বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমানের সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিক নেতা আমির হোসেনের দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল।

এর জেরে গত ১৮ নভেম্বর খলিলকে কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে আমিরের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে খলিলের সমর্থকরা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ বলেন, ওই ঘটনায় দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করে। পুলিশ শনিবার রাতে ওই মামলার আসামিদের ধরতে চাঁনপুর এলাকায় গিয়ে হামলার মুখে পড়ে।

পুলিশ খলিলের সমর্থক দিপু ও সুজনকে আটক করলে তাদের সহযোগী ও এলাকার লোকজন টেঁটা, বল্লম ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দিপু ও সুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।

স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই আসামি ধরতে গেলে পুলিশকে বাধা দিলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই আশিকুর রহমানের মৃত্যু হয়।

“আসামি ধরার সময় পুলিশের সাথে প্রতিপক্ষ আমির হোসেনের লোকজন ছিল। এই কারণে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।”

ওই এলাকার বাসিন্দা শামীম ও আলী আহাম্মদ বলেন, বাজার করতে আসা আশিক পুলিশের গুলিতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে রক্তরক্ষণ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

নিহত আশিকুর রহমান আশিকের চাচাত ভাই ফজল হক বলেন, দুই বছর আগে আশিক বিয়ে করেছেন। তাদের সংসারে আট মাসের সন্তান আছে।

“শনিবার রাতে কাজ শেষে বাড়ি আসার পর তার স্ত্রী বানেছা বেগম তাকে তরকারী আনার জন্য বাজারে পাঠান। রাতে তারা আশিকের মুত্যুর খবর জানতে পারেন।”

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, নিহতের বাম পায়ের উরুতে গভীর ক্ষত রয়েছে, ডান পাশে নিতম্বে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। বাম পায়ের হাড় ভাঙ্গা  আছে।

“আঘাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ থেকে তার মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতগুলো দেখে মনে হচ্ছে গুলির চিহ্ন।”

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করলে তারা জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে।

“আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছোড়ে। তারা পুলিশের ওয়্যারলেস সেট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও শটগান ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সে কারণে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়েছে।”

এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। হত্যার ঘটনায় আরও একটি মামলা করা হবে বলে তিনি জানান।

গত ১৮ নভেম্বর মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পরিবহন চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার জের ধরে ইউপি সদস্যের সমর্থকরা লাঠিসোঠা নিয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়াসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এ সময় দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে।