নিহত সুমন মিয়ার (২২) বুকে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও তা কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়ে চিকিৎসক কিংবা পুলিশের স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আনলিমা টেক্সটাইলের এই শ্রমিককে মঙ্গলবার বিকালে তার যে সহকর্মী সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনিও মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেননি।
তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের মজুরি সকার বাড়ালেও মালিক পক্ষ সে অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে গত দুদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সাভারের আশুলিয়া ও হেমায়েতপুর এলাকার অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হন।
এর মধ্যেই সাভার পৌরসভার উলাইল এলাকার আনলিমা টেক্সটাইলের কাটিং সহকারী সুমনকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার সহকর্মী রিপন মিয়া। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে জানান যে সুমন মারা গেছেন।
রিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কারখানার ভিতর থেকে অজ্ঞান অবস্থায় সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, তা জানি না।”
হাসপাতালের রেজিস্টারে সুমন মিয়ার বয়স ২২ বছর এবং ঠিকানা দেওয়া রয়েছে সাভারের কর্নপাড়া।
হাসপাতালে থাকা সুমনের বাম বুকে ক্ষতচিহ্ন দেখা গেলেও তা কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সুমন মিয়া নামে এক শ্রমিককে নিয়ে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
ময়নাতদন্তের জন্য সুমনের লাশ সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি আবদুল আউয়াল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুমন আনলিমা গামের্ন্টসের শ্রমিক। কিন্তু ওই কারখানায় আজ কোনো শ্রমিক অসন্তোষ হয়নি। কীভাবে সে মারা গেল, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাবে না।”
শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে আনলিমা টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তৈরি পোশাক রপ্তানির এই কারখানায় ১ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করেন।
সকালে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার স্টান্ডার্ড গ্রুপের সামস, টিসিএল-২ ও ডার্ড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা মহাসড়কে বিক্ষোভে নামলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এছাড়া আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার মদিনা অ্যাপারেলস, কাঠগড়া জিরাব এলাকার সাউদার্ন মিলেনিয়াম, টেক্সটাউন গ্রুপ, হ্যকন কোরিয়া, সাউদান ডিজাইন, মেট্রোনিটিং, চারাবাগ এলাকার নিউ এশিয়া, লিলি ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামে।
শ্রমিকদের এই অসন্তোষেরে প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিকালে শ্রম ভবনে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসে সরকার।
বৈঠকে নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় মালিক পক্ষের ৫ জন, শ্রমিক পক্ষের ৫ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখে তা সমাধানে পথ বের করতে বলা হয়েছে।