প্রতিবছর এ সময় গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী এ বড়ি তৈরির রেওয়াজ রয়েছে।
বাজারে এখন বিভিন্ন কুমড়ো বড়ি কিনতে পাওয়া গেলেও চালকুমড়া বা মুলার সঙ্গে মাসকলাইয়ের ডাল মিশিয়ে তৈরি এ বড়ি স্থানীয়দের খুবই প্রিয়।
শার্শা উপজেলার উত্তর বারোপোতা গ্রামের গৃহবধূ শামীমা আক্তার বিউটি বলেন, “প্রতিবছর শীত এলেই চালকুমড়া ও মাসকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করি। ওই বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় ভরে অনেক দিন রাখা যায়। তরকারিতে এ বড়ি দিলে খুব সুস্বাদু হয়।”
বড়ি তৈরির পদ্ধতি জানালেন শার্শা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা শিল্পী।
শিল্পী বলেন, বড়ি দেওয়ার আগের দিন মাসকলাইয়ের ডাল (স্থানীয়দের ভাষায় বলে ‘ঠিকরি’ কলাই) খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, পরদিন ভোরে ডালের পানি ছেঁকে মিহি করে বেটে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পানি ঝরানো কুমড়ার সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও হালকা লবণ মেশাতে হবে। পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের উপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হবে।
এই বড়ি ভালো করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় । বড়ি সাধারণত সাদা রংয়ের হয়ে থাকে তবে জাফরান মিশিয়ে রঙিনও করা যায় বলে শিল্পী জানান।
বড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পেস্ট বানানোই সবচাইতে কষ্টের কাজ জানিয়ে সামটা গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন আক্তার বলেন, “যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে পেস্ট তৈরিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন বাড়িতে কেউ আর ডাল বেঁটে পেস্ট তৈরি করে না। মেশিনে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে আসে।”
যাদবপুরের ফাতেমা খাতুন বলেন, মাসকলাইঢের সাথে পিঁয়াজ, পাকা লাউ, আলু, পেঁপে, কপিসহ নানা পদের সবজি মিশিয়ে বড়ি তৈরি করা যায়। বিশেষ করে পিঁয়াজের বড়ি বেশ সুস্বাদু; কিন্তু এগুলো বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না।
কালিয়ানি গ্রামের লতা বেগম (৬০) বলেন, শীত এলেই একে অপরকে বড়ি দিতে সহযোগিতা করা তাদের গ্রামের রেওয়াজ। বছর পঁচিশেক আগে শ্বশুরবাড়ি এসে তিনি শাশুড়ির কাছ থেকে এ রেওয়াজ শিখেছেন।
“তবে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা এসব শিখতে কিম্বা বড়ি তৈরি করতে আগ্রহী না। তারা এই রেওয়াজ থেকে যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে, তাতে আগামী দশ বছর পর এটা হারিয়ে যাবে।”
যশোরের জামতলা বাজারের মুদি দোকানদার আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, “এখনও বাজারে নতুন বড়ি আসেনি তবে ভারতের সয়াবিনের বড়ি আছে; যা দুই শত টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।”