সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে। এ সময় রাস্তার দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, যা দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ২৫টি গার্মেন্টস কারখানার জানালার কাচ ভাংচুর করে। বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙে।
পুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চল পুলিশের এএসপি সুমন মিয়া ও ফতুল্লা মডেল থানার ওসি এসএম মঞ্জুর কাদের, ১২-১৩ পুলিশ সদস্য ও শ্রমিকসহ অন্তত অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছে।
আহতদের কয়েকজনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, উৎপাদান মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিসিক শিল্প নগরীতে ‘ফকির নীটওয়্যার’ কারখানার শ্রকিদের মধ্যে গত তিন দিন ধরে অসন্তোষ চলছিল। মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধি করলেও দাবি অনুযায়ী বৃদ্ধি না হওয়ায় শ্রমিকরা রোববার কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করে।
মাহাবুব বলেন, বৈঠকে শ্রমিকরা বেশ কিছু দাবি দাওয়া উপস্থাপন করে। আলোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু দাবি মেনে নেয় কৃর্তপক্ষ; তবে মুজরি বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয় আশপাশের আরও আট-দশটি কারখানার দর যাচাই-বাছাই করে তাদের মুজরি বৃদ্ধি করা হবে।
“কিন্তু শ্রমিকরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে কারাখানা থেকে বের হয় এবং বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তাদের সাথে এসে আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা যোগ দেয়।”
মাহাবুব জানান, এই পরিস্থিতিতে বিসিক শিল্পনগরীর সকল ফ্যাক্টরিতে একযোগে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিক্ষোভরত শ্রমিকরা যাওয়ার সময় বেশ কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে।
তারা এমভি নীট ওয়্যার, এসম এস ডাইং, পেনটেক্স, রবিনটেক্স, বিসিক শিল্পনগরীর বাইরে চর নসিংপুর সাহিল গার্মেন্টস, তারা স্পিনিং মিলস, হাসেম স্পিনিংসহ কমপক্ষে ২৫ কারাখানায় ভাংচুর করে বলে মাহাবুব জানান।
তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও ফতুল্লা থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
এ সংঘর্ষের সময় শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়া ও ফতুল্লা থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ও ১২-১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত শ্রমিক আহত হয় বলে মাহাবুব জানান।
শ্রমিক রাজ্জাক ও সুমন মিয়া বলেন, কয়েক মাস ধরে ফকির নীট ওয়্যার কারাখানায় উৎপাদন মুজরি আগের চেয়ে কমিয়ে দেওয়া হয় এবং হেলপারবিহীন চাইনিজ লাইন পদ্ধতি চালু করা হয়। এ কারণে শ্রমিকদের বিরতিহীনভাবে আট থেকে নয় ঘণ্টা টানা কাজ করতে হয়। কিন্ত টানা কাজ করলেও উৎপাদন মজুরি বাড়নো হয়নি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
শ্রমিক আল-আমিন বলেন, “সংঘর্ষের সময় পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করেছে।”
তিনি বলেন, শ্রমিকদের সাথে মিশে কিছু বহিরাগত চিহ্নিত সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে।
তার নিজের ফ্যাক্টরি এমভি নীট ওয়্যারে পকেট গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে শ্রমিকরা তান্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন হাতেম।
তিনি এসব বহিরাগতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জনান সরকারের প্রতি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুব-উন-নবী জানান, সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কে অবরোধ করে। এ সময় দুদিকে তীব্র যানজট হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে এই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।