প্রশাসনিক দায়িত্ব ছাড়লেন ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষক

ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ জন শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2018, 03:10 PM
Updated : 8 Oct 2018, 05:16 PM

শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মীর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, সোমবার দুপুরে ৫৬ জন শিক্ষক বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রসাশনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহা. তৌহিদুল ইসলামের কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানান শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মোজাম্মেল হক।  

পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন দুই জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চার জন ডিন, চার জন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সকল হাউজ টিউটর এবং সকল সহকারী প্রক্টর।

মোজাম্মেল হক জানান, গত শনিবার ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস নামে এক ছাত্রী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তিনি পেয়েছেন সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ১.৯৮। কোনো শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ হতে হলে সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে কমপক্ষে ২.২৫ পেতে হয়।

ঈশিতা উত্তীর্ণ হতে না পারায় কর্তৃপক্ষ তাকে রোববারের কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি বলে জানান মোজাম্মেল।

“কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার সহযোগীদের নিয়ে রোববার সকালে ঈশিতাকে জোর করে পরীক্ষার আসনে বসিয়ে দেন।

“এ সময় বিভাগের শিক্ষকরা বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার এই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান, শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিমকে গালাগাল দেন এবং মারতে উদ্যত হন।”

এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করান বলে অভিযোগ করেন মোজাম্মেল।

মোজাম্মেল আরও বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় রোববার বিকাল ৪টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়।

শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরে উপাচার্য বরাবর দুইটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয় বলে জানান মোজাম্মেল।

রোববার রাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেন

তিনি বলেন, পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্যের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্র-ছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের মিছিল-শ্লোগান শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মিছিল-শ্লোগান চলে।  

শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা ও ফলাফল পদ্ধতি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী হয় বলে শিক্ষক সমিতি নেতা মোজাম্মেল জানান।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্যের অফিস থেকে সভা শেষে বের হয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাইরে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীদের বলেন শিক্ষকরা অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

এরপর ছাত্রলীগ নেতারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর প্রতিশ্রুতি দিলে ছাত্র-ছাত্রীরা হলে ফিরে যান বলে ওই শিক্ষার্থী জানান।