শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

বেতনের দাবিতে গাজীপুর সদরের হোতাপাড়ায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ ছয় ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2018, 01:07 PM
Updated : 17 August 2018, 01:09 PM

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণে উদ্যোগের আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

ঈদের আগে অগাস্টের ১৫ দিনের বেতনের দাবিতে অ্যালিগেন্টস গ্রুপের কেসিওপিয়া কারখানার নিটিং ও ডায়িং শাখার শ্রমিকরা শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিকাল ৪টায় তা প্রত্যাহার করে।

কারখানার শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অগাস্ট মাসের ১৫ দিনের বেতন-ভাতার দাবিতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।

“পরে গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এসে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আগামী রোববার অগাস্টের ১০ দিনের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।”

অ্যালিগেন্টস গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার বজলুর রহমান বলেন, “প্রশাসন ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে চলতি মাসের ১০ দিনের বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

হোতাপাড়া শিল্প পুলিশ ক্যাম্পের ওসি হাবিব ইস্কান্দার বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। পরে অগাস্টের ১০ দিনের বেতন দেওয়ার আশ্বাসে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে চলে যায়।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কারখানার মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ায় তারা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়।”

ঘটনাস্থলে মেয়রের সঙ্গে ছিলেন শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান, শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত সুপার নূরে আলম সিদ্দিক, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম এবং হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রফিকুল ইসলাম রফিক।

গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মহাসড়কে পুরাতন টায়ারে ও ঝুটে অগ্নিসংযোগ করে অবরোধ করে রাখে।

তিনি জানান, এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কের উভয় পাশের অন্তত ২৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয় এবং ভোগান্তিতে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী।

কারখানার ফিনিশিং বিভাগের শ্রমিক নাদিম মিয়া ও ফিরোজ বলেন, জুলাই মাসের বেতন অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে পেয়ে বাসা ভাড়া, দোকান খরচ ও অন্যান্য জায়গায় খরচ হয়ে গেছে। যে পরিমাণ বোনাস দিচ্ছে তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদে খরচ করা সম্ভব নয়। এখন ঈদের কেনাকাটার টাকা তাদের হাতে নেই। তাই তারা কারখানা কর্তৃপক্ষকে অগাস্টের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেতন না দেওয়ার ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তারা আন্দোলনে নামে।

ঈদে ঘরমুখোদের ভোগান্তি

পরিবার ও স্বজন নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে ঢাকার ব্যবসায়ী মুজিবুল হক সকালে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু যানজটে আটকে ছিলেন বিকাল পর্যন্ত। প্রচণ্ড গরমে তার শিশু সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসেছেন মায়ের চিকিৎসা করাতে।

তিনি বলেন, গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে মাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেও যানজটে আটকে ছিলেন দীর্ঘ সময়।

শেরপুর থেকে কোরবানির গরু নিয়ে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছিলেন শহিদুল ইসলাম নামের এক গরু ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে যানজটে আটকে যান। তীব্র রোদে গরুগুলো হাঁপিয়ে উঠলে আশপাশ থেকে পানি এনে সেগুলোর উপর ছিটিয়ে দেন।

আলম এশিয়া পরিবহনের বাস চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “ময়মনসিংহ থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় রওনা দিয়েছিলাম। মহাসড়কের ভবানীপুর পার হওয়ার যানজটে আটক পড়লে সকল যাত্রীরা নেমে যাওয়ায় গাড়ি ঘুড়িয়ে এখন আবার ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।”

ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে ডিম নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ট্রাক চালক আফজাল হোসেন।

তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে যানজটে আটকে আছেন। প্রচণ্ড গরমে গাড়িতেই তার ডিম নষ্ট হয়ে গেলে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।