বরিশাল সিটি: সবচেয়ে ধনী বিএনপির সরওয়ার

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি ধনী প্রার্থী বিএনপির মজিবর রহমান সরওয়ার।

কাওছার হোসেন বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2018, 12:18 PM
Updated : 4 July 2018, 01:24 PM

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সব থেকে কম সম্পদের মালিক বাসদের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা থেকে এসব পাওয়া গেছে।

মেয়র পদে আট প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির মজিবর রহমান সরওয়ার আইনে স্নাতক, আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেন, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন বিএসসি, বাসদের মনীষা চক্রবর্তী এমবিবিএস, সিপিবির একে আজাদ আইনে স্নাতক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবাইদুর রহমান মাহবুব দাওরা হাদীস, খেলাফত মজলিসের একেএম মাহবুব আলম ও জাতীয় পার্টি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু এসএসসি পাস।

হলফনামা ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির বরিশাল মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরওয়ারের বার্ষিক আয় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা। বর্তমানে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ টাকা।

সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কৃষিজমি ৪ একরের কিছু বেশি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি টিনশেড বাড়ি। এগুলোর মূল্য তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা।

গত ১০ বছরের তার সম্পদ ১০ গুণ বেড়েছে বলে বিবরণী থেকে জানা যায়।

২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত তার হলফনামা থেকে জানা যায়, ওই সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অন্যান্য আয়ের উৎসের মধ্যে কৃষিতে ৩০ হাজার এবং বাড়িভাড়া বাবদ ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

এবার আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিতে ১ লাখ ২৬ হাজার, ব্যবসা ১০ লাখ, বাড়িভাড়া ১২ লাখ ৩ হাজার ৬শ টাকা, চাকরি ও সম্মানী বাবদ ২৪ লাখ, ব্যাংক মুনাফা ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৮ টাকা উল্লেখ করেছেন সরওয়ার।

দুইটি প্রাইভেটকার এবং একটি জিপ মিলে মোট তিনটি গাড়ি রয়েছে তার। হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী এসব গাড়ির দাম ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ৫০ তোলা সোনা এবং প্রায় ১৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার।

সরওয়ারের বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতি, আয়কর ফাঁকিসহ ১৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পেশায় ব্যবসা উল্লেখ্য করে নিজেকে কান্তা করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক পরিচয় দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

বাসা ভাড়া আর ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৮ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা।  নগদ রয়েছে ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করেছেন ২ লাখ টাকা।

এছাড়া সাদিক আব্দুল্লাহর রিকন্ডিশন একটি মাইক্রোবাস, রাজউকের পূর্বাঞ্চলে একটি আবাসিক প্লট এবং ঢাকার নিকেতনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের বার্ষিক আয় ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৫ টাকা। নগদ ৯৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯৬ টাকাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগের শেয়ার মিলিয়ে তার রয়েছে মোট ১ কোটি ৬৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৮ টাকা।

এছাড়া ১৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তাপসের। ৬০ তোলা স্বর্ণ ছাড়াও তার রয়েছে ৫১ হাজার ৫৬৫ টাকার আসবাবপত্র। ব্যাংকে রয়েছে ২৫ লাখ ১০ হাজার ২৩৩ টাকার ঋণ। নিজস্ব জমি বা বাড়ির বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।

তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলা রয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন মামলার সব কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

দায়-দেনা বলতে দুটি ব্যাংক থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন জাতীয় পার্টির এই প্রার্থী। রূপালী ব্যাংক মোহাম্মদপুর শাখা থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন গাড়ি কেনার জন্য। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শাখা থেকে গৃহ সংস্কারের জন্য ঋণ নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা।

বাসদ বরিশাল জেলা শাখা সদস্য সচিব মনীষা চক্রবর্তীর বার্ষিক কোনো আয় নেই। সম্পদ বলতে নগদ দেড় লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে তিন লাখ টাকা। পারিবারিক ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের একজন অংশীদার তিনি।

তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশের (সিপিবি) বরিশাল জেলা সভাপতি। ভূমিহীন এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

পেশায় আইনজীবী এই প্রার্থীর বছরে আয় ২ লাখ ৬ হাজার টাকা। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি  ১১ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও সাত ভরি স্বর্ণালংকার।

হেফাজতে ইসলামী বরিশাল মহানগর আমির ওবায়দুর রহমান মাহবুব। এবার তাকে মেয়র প্রার্থী করেছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

নগরীর মাহমুদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহবুবের বার্ষিক আয় ২ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। কোনো মামলা নেই তার বিরুদ্ধে।  ৬ শতাংশ অকৃষি জমিসহ টিনসেড একটি ঘর রয়েছে এই মেয়র প্রার্থীর। আছে ৮ তোলা স্বর্ণ।

খেলাফত মজলিসের বরশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা বার্ষিক আয় তার।  নগদ জমা অর্থের পরিমান ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫০ টাকা। স্বর্ণ আছে ৮ তোলা, এক একর ৩৮ শতাংশ জমির মালিক তিনি। একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর আছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু বরিশাল সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। বাড়িভাড়া বাবদ বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নগদ আছে ৩ লাখ টাকা। বসবাস করেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বাড়িতে।