চাষিরা এখন বীজ ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই বড়ছে পিঁয়াজ বীজের চাষ।
ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ তিনকর চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের চার হাজার মণের বেশি পিঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে, যার বাজার প্রায় মূল্য ২৮ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে এক হাজার ১২৭ মেট্রিক টন পিঁয়াজ বীজ শুধু ফরিদপুর জেলাতেই উৎপাদিত হবে।
সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পিঁয়াজ বীজের ৬০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে হয়ে থাকে বলে জানান তিনকর চন্দ্র।
অম্বিকারপুর এলাকার গোবিন্দুপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো আরও অনেকেই জানান, এই মৌসুমে তারা বীজ তোলার কাজ করে যে পিঁয়াজ পান তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পিঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।
মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক এসেছেন রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে।
এদের মধ্যে আব্দুর রহমান, হাফিজুর শেখ জানান, পিঁয়াজ বীজ তোলার সময় তাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে কাজ করতে। এই সময়টায় ভালো আয় হয় তাদের।
এলাকার পিঁয়াজ বীজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পিঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি তিন মণের বেশি বীজ উৎপাদিত হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ পিঁয়াজ বীজের দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজারের অধিক টাকা। আর খরচ প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি আড়াই লাখ টাকার বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকরা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভুক্ত পিঁয়াজ বীজ চাষি মো. আকবর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বছর চার বিঘা জমিতে পিঁয়াজ বীজের চাষ করছি। খুব ভালো হইছে ক্ষেত। আশা করছি ১২ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।”
একই গ্রামের মো. বক্কার খান বললেন, “পিঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পিঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মতন।”
এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে বলে জানান তিনি।
তার দাবি, বিএডিসি প্রতিবারের মতো এবারও যেন সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে এই বীজ সংগ্রহ করে। তবেই চাষিরা লাভবান হবে; উৎসাহিত হবে এই বীজ আবাদে।
তিনি আগামীতে আরও বেশি জমিতে ‘কালো সোনার’ চাষ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয় , বর্গা চাষিদের লোন দেয় না। তাই তারা বাধ্য হয়ে এনজিওর কাছ থেকে অধিক সুদে ঋণ নিয়ে পিঁয়াজ বীজ চাষ করেন।
সরকার বর্গা চাষিদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে অন্য জমির মালিকের মতো বর্গা চাষিরা আরও বেশি লাভের মুখ দেখবে বলে তার বিশ্বাস।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে; এই কারণে এই ফসলকে ‘কালো সোনা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কৃষি বিভাগ জেলা পিঁয়াজ বীজ চাষিদের নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে, যে কারণে দিন দিন পিঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে বলে তার ভাষ্য।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফরিদপুরের পিঁয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবক তাদের কর্মস্থানের পথ খঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো পিঁয়াজ বীজ চাষ।
ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পিঁয়াজ বীজ চাষিদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।