পিঠা উৎসব, ভলিবল টুর্নামেন্ট আর চিরাচরিত রাজা-রানি, নকশিকাঁথা, গরুর গাড়ি, মুখোশ তো আছেই। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, নৃত্যানুষ্ঠান, সঙ্গীত, নাটিকা ইত্যাদি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
শিকা ডুলি লাঙল জোয়াল নিয়ে ময়মনসিংহে বর্ষ বরণ
সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বর থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর গাঙ্গিনাপাড়, নতুন বাজার ও টাউন হল মোড় হয়ে বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
এতে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি, পালকি, কুঁড়েঘর, জেলের দল, বাবুই পাখির বাসা, ডুলি, শিকা, কুলা, লাঙল-জোয়াল, পলো, হুঁকো, চরকা, রাজা-রানি, বর-কনে, বাউল, জারি গানের দল, ফেরিওয়ালা, হাতপাখা, নকশি খাতাসহ বিভিন্ন গ্রাম-বাংলার সরঞ্জাম নিয়ে অংশ নেন নান শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। অংশ নেন বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পৌরমেয়র ইকরামূল হক টিটু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আমির আহম্মেদ চৌধুরী রতন, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক খোকাসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।
পরে বৈশাখী মঞ্চে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রাজশাহী
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বাউল সম্রাট লালনের এই অমর সৃষ্টিকে প্রতিপাদ্য করে শনিবার সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। ঢাক-ঢোলের বাদ্য আর তরুণ-তরুণীদের হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছিল শোভাযাত্রা।
রাজশাহীতে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজ বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে সেখানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার সেখানে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাও শুরু হয়েছে।
কারাগারে বিশেষ খাবার
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবার, শিশু সদনে (এতিম খানায়) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিশু পরিবারে শিশুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নববর্ষে রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখান এবং জিয়া পার্ক সর্বসাধারণের জন্য বিনা টিকেটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যেন কেউ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
হা ডু ডু ও লাঠি খেলায় ফরিদপুরে বর্ষবরণ
সকাল ৭টা থেকে শুরু করে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করছে ফরিদপুরবাসী।
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া বিকাল ৫টায় কলেজ মাঠে হবে হা ডু ডু ও লাঠি খেলা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নানা আয়োজনে বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখকে বরণ করে নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রাজশাহীর হাজার হাজার মানুষ।
সকাল ১০টায় চারুকলা অনুষদ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকে বাড়ি দিয়ে বর্ষবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ ছিল বৃহদাকৃতির পায়রা ও ষাঁড়।
এছাড়াও শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’ অশান্ত পৃথিবীতে চলমান যুদ্ধ, বিগ্রহ ভুলিয়ে সবার মাঝে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবে।
বিকালে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত ও বাউল সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, হরবোলা, অভিনয় ও বাঙালি ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন বিভাগ এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
মার্কেটিং বিভাগের উদ্যোগে রবীন্দ্র কলাভবনের সামনে ‘শিরোনামহীন’ ও অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে ‘আরবোভাইরাস’ শেখ রাসেল চত্বরে কনসার্টে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করে।
ক্যাম্পাস জীবনের অনেকেরই প্রথম ও শেষ পয়লা বৈশাখ উদযাপন এটি। এবারই ক্যাম্পাসের শেষ পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সে শিক্ষার্থী শিবলু হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লুৎফর রহমান বলেন, “পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে যেন বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর ছিল। কড়া নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কুড়িগ্রামের লেডিস ক্লাবে পিঠা উৎসবে বর্ষ বরণ
কুড়িগ্রাম লেডিস ক্লাবে হয়েছে পিঠা উৎসব। পান্তা-ইলিশের আয়োজন তো ছিলই।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে পিকেএসএফ ও আরডিআরএস বাংলাদেশের সহযোগিতায় সকাল ৭টা থেকে দিনব্যাপী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
শিশু একাডেমি চত্বরে লোকজ সঙ্গীত, ক্যুইজ, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা কারাগার, সদর হাসপাতাল, সরকারি শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা হয়।
বৈশাখ উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎসবের পাশাপাশি দোকানে দোকানে হালখাতা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঘুড়ি উৎসবে অংশ নিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আর জেলা শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা তো ছিলই।
চাঁদপুর
সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর নানা আয়োজন করেছে বিভিন্ন এলাকায়। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ষবরণের গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত নিকেতনের শিল্পীরা।
মাগুরা
জেলা শহরের নোমানী ময়দানে ছিল জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টায় বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। শহর ঘুরে শেষ হয় নোমানী ময়দানে গিয়ে।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী বিরেন শিকদার, জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান, পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুণ্ডসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
দিনাজপুর
সকাল সাড়ে ৯টায় জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উদীচীর আয়োজনে হয়েছে প্রভাতী অনুষ্ঠান।
ভলিবল টুর্নামেন্ট দিয়ে বর্ষ বরণ যশোরের নাভারণে
যশোরের বন্দর নগর বেনাপোল, নাভারণ, বাগআঁচড়াসহ উপজেলার সব এলাকার মানুষ উৎসবের আমেজে বাংলা নতুন বছর বরণ করে নিয়েছে।
নাভারণ খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে নাভারণ ডিগ্রি কলেজ মাঠে হয়েছে চারদলীয় ভলিবল টুর্নামেন্ট। এটা উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু।
প্রতিবছরের মত বেনাপোল ও বাগআঁচড়ায় বসেছে মেলা। সেখানে উৎসব ঘিরে ছিল চিরায়ত মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশের আয়োজন, নানা পদের ভর্তা দিয়ে পান্তা ইত্যাদি ব্যবস্থা।
বেনাপোল পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বন্দরনগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বলফিল্ডে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পান্তা ইলিশের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল বলে জানিয়েছেন পৌরমেয়র আশরাফুল আলম লিটন।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, বরাবরের মতই সরকারিভাবে উপজেলা সদরে বরণের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করছেন।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্রে বাগআঁচড়া বাজারে এসে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।