ঢাকায় চাকরি প্রার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দিয়েছে।
Published : 09 Apr 2018, 07:26 PM
রাজধানীর শাহবাগ মোড় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর রোববার রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটাসহ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ তাদের উঠিয়ে দেয়। তখন অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।
এর প্রতিবাদে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের রোববার রাতভর সংঘর্ষ হয়। একই রাতে বিক্ষোভ দেখায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেয় সারাদেশের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
এ পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলনরতদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয় সোমবার বিকালে। সরকারি চাকরির বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে বিক্ষোভ
ঢাকায় চাকরি প্রার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর রোববার রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটাসহ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ।
তখন অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, “ঢাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে আজ আমরা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছি। যত দিন কোটা সংস্কার করা না হবে, তত দিন আমাদের এ আন্দোলন চলবে।”
রাত আড়াইটার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
এর আগে রোববার দুপুরেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করে আন্দোলন করেন এই শিক্ষার্থীরা।
রাত আড়াইটায় তারা ক্যাম্পারে ফিরে গেলেও সোমবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ কারণে আন্তঃজেলা যানবাহনগুলো কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বাইপাস সড়ক ব্যবহার করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের নীরব কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে।”
মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘পিতা তুমি ফিরে এসো, বৈষম্য দূর করো’, ‘মরতে হলে একসঙ্গে মরব, তবু দাবি আদায় করে ছাড়ব’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এদিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল করতে পারেনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বিপ্লব হোসেন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কোটা সংষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হটব না।”
আন্দোলন সম্পর্কে প্রক্টর লুৎফর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাকে আশ্বস্ত করেছে তারা কোনো ধরনের সহিংসতা করবে না। যদি তাদের মধ্যে কেউ সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তারাই তাকে আমাদের কাছে ধরে দেবে বলে কথা দিয়েছে।
“আন্দোলনটি যেহেতু সারাদেশে চলছে, তাই সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে যদি কেউ আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক্লাস বর্জনের বিষয়ে প্রক্টর বলেন, “ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তবে পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা চলছে।”
আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে রুয়েট ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়েও
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এই আন্দোলনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছে। পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো বিভাগে ক্লাস হয়নি।
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
গোপালগঞ্জে কোটা সংষ্কারের দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে।
সোমবার সকাল ১০টায় তারা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখঅয়। তারা সড়কে বাঁশ ও ইট-পাটকেল ফেলে ব্যারিকেড দেয়। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিয়াজ বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে নেমেছি। এ দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।”
কোট ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র রিয়াদ।
তিনি বলেন, “আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমি কোটা প্রথা চাই না। এতে প্রকৃত মোধাবীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “আন্দোলন শুরুর আগে সকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ক্লাস হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে সামান্য কিছু ক্লাস হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত সব পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ
ঢাকায় চাকরি প্রার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় জাগাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে।
এর আধা ঘণ্টার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল মারতে থাকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ থেকে ২০ শিক্ষার্থী আহত হন।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।
গত ১৪ মার্চ তারা ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন।তারপর নানা কর্মসূচি পালনের পর রোববার পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয় তারা। বেলা আড়াইটার দিকে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে তারা সমবেত হয়।
তারা সাড়ে চার ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর পর রাত পোনে ৮টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের উঠিয়ে দেয়।
দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আনোদালনরত শিক্ষার্থী নাইমা, রোকন, রাশেদ ও রুবেলসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। শান্তিপূর্ণভাবেই দাবী আদায় করতে চান।
দুপুরে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।
সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
সারাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে এবং ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সোমবার সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন।
শিক্ষার্থীরা ফটকের সামনে থেকে সরে এর সামনে রাস্তা দুই পাশে অবস্থান নেয়। তবে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগের পাশাপাশি প্রশাসনও বাধা দিয়েছে। আমরা দুপুরে মানববন্ধনের অনুমতির জন্য প্রক্টরের কাছে গেলে তিনি অনুমতি দেননি।”
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সোহাগ বলেন, “আমাদের দাবি হচ্ছে কোটা সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যে বৈষম্য বিদ্যমান তা দূর করা। আমরা আশা করি সরকার দ্রুত আমাদের নৈতিক দাবি মেনে নিয়ে এ বৈষম্য দূর করবে।”
আন্দোলনে বাধা দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান বলেন, “অহিংসভাবে নৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অধিকার সকলরেই রয়েছে। আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার কথা বলেছি।”
আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা তো তাদের আন্দোলনে অফিশিয়ালি সাপোর্ট দিতে পারি না। দিলে সেটা হয়ে যাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্দোলনে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
কুমিল্লায় আন্দোলন
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই, কেটা প্রথা সংস্কার চাই’ এই শ্লোগান নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়েছে কুমিল্লা।
শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
পূবালী চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
শিক্ষার্থীরা ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিয়ে কোটা সংস্কারের দাবির শ্লোগানও দেয়।
পরে তারা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীরের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়।
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সোমবার বেলা ১১টায় ‘শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
সকাল থেকেই সংগঠিত হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিলসহ গোটা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মূল ফটকের সামনে সমবেত হয়। এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে ছাত্রছাত্রীরা বের হয়ে মিছিলে যোগ দেয়।
তবে সব ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রক্টর মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বিক্ষোভ ক্লাস-পরীক্ষায় কোনো প্রভাব ফেলেনি।”
ময়মনসিংহে ৮ ঘণ্টা রেল বন্ধ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কারের দাবিতে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা ১১টায় বন্ধ হওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টায় অবরোধ তুলে নিলে আবার চালু হয়।
রেলওয়ের ময়মনসিংহ স্টেশন ইনচার্জ জহিরুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে সোমবার সকালে ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে ঢাকাগামী বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারেনি।
“একই কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অগ্নিবীণা ট্রেনটি গফরগাঁও ও মহুয়া ট্রেনটি ফাতেমানগর স্টেশনে আটকা পড়ে। এরপর থেকে এই লাইনে আট ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।”
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে, বসে থাকতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলমান ৫৬ শতাংশ কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহিদুল কবীর বলেন, সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দরিরামপুরে। এ সময় কোনো শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ ও ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
“তবে ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল।”
পরে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুজাফর রিপন, ত্রিশাল থানার ওসি জাকিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ শান্ত করেন।
ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
সকালে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলেও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে ক্যাম্পাসে ফিরে যায় বলে জানিয়েছেন ত্রিশাল থানা ওসি জাকিউর রহমান।