‘আমার ভোট দিল কে?’

রাঙামাটিতে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ফজলে এলাহী রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2018, 05:39 PM
Updated : 30 March 2018, 05:39 PM

ভোট শেষ হওয়ার তিনঘণ্টা আগে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সৈকত রঞ্জন চৌধুরী।

শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়।

নিজের ভোট দেওয়া হয়েছে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) অন্যতম শীর্ষ নেতা সুদর্শন চাকমা।

শুক্রবার বিকালে তিনি বলেন, “শুনেছি আমার ভোট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তো বড় ধরনের কারচুপি। কারণ আমি শেষ কবে রাঙামাটি গেছি নিজেও ভুলে গেছি। আমি রেডক্রিসেন্ট এর আজীবন সদস্য। আমি তো জানিই না নির্বাচন হচ্ছে।”

অন্য কেউ দিয়ে তার ভোট দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ভূতে হয়ত আমার ভোট দিয়েছে! একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে এমনটি হওয়া উচিত না।”

শুধু সুদর্শন চাকমাই নন, জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে অনুসন্ধানেও।

দুই বছর ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করা শহরের পুরানপাড়ার বাদশা আলমগীর, শুক্রবার বাঘাইছড়িতেই অবস্থান করা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাবেদুল আলম, মায়ের মৃত্যুতে মিলাদ মাহফিলের কারণে কাউখালীতে থাকা জসীমউদ্দীনসহ অসংখ্য অনুপস্থিত ভোটারের  ভোট পড়েছে জেলা শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবি এই সংগঠনের রাঙামাটি ইউনিটের নির্বাচনে।

রাঙামাটি রেড ক্রিসেন্টেই দীর্ঘদিন ধরে যুব প্রধান ও ইউনিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বর্তমান লক্ষ্মীপুর রেড ক্রিসেন্টে একই পদে কর্মরত নাসরিন আক্তার ভোট দিতে এসে দেখেন আগেই দেওয়া হয়ে গেছে তার ভোট। 

কেন্দ্রে না আসা আরেক ভোটার স্কুলশিক্ষক ও আজীবন সদস্য খুশি নাহারের ভোটও দিয়ে দিয়েছে জালভোট প্রদানকারীরা। 

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির বিগত কমিটির সদস্য মো. জসীমউদ্দীন বলেন, “আমি তো শুক্রবার সারাদিন কাউখালীতেই। আমার মায়ের মৃত্যুর কারণে পারিবারিকভাবে একটি মিলাদ মাহফিলের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। শুনলাম আমার ভোটও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা লজ্জাজনক।”

আজীবন সদস্য খুশি নাহারও তার ভোট দিয়ে দেওয়ার খবর শুনে বিস্মিত।

তিনি বলেন, “আমার কাছে তো কোনো প্রার্থী ভোটও চায়নি, আমি জানিও না যে নির্বাচন হচ্ছে।”

সুদর্শন চাকমা, জসীমউদ্দীন কিংবা খুশি নাহারই নয়, এমন অসংখ্য ভোটারের ভোট দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।

মজার ব্যাপার হলো সব অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, “আমি সুদর্শন চাকমার সাথে নিজে কথা বলেছি, তিনি উপস্থিত ছিলেন, আমরা পাশাপাশি বসেও ছিলাম।”

বেলায়েতের কথা শুনে তো বিস্মিত সুদর্শন চাকমা।

তিনি বলেন, “একটা সামান্য রেড ক্রিসেন্ট নির্বাচন নিয়ে এমন ভয়ংকর মিথ্যাচার কেন? আমি নিরাপত্তাজনিত কারণে কত বছর ধরে রাঙামাটি যাই না, আর ওনি দাবি করছেন আমার সাথে বসেছেন। ওনি কি তবে আমার ভূত দেখেছেন? আশ্চর্য্য আমি। আমি ওনাকে চ্যালেঞ্জ করছি। এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভূয়া কথা কীকরে বলে এরা?”

এদিকে বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই ভোট গণণা শেষ হয়েছে জানিয়ে বিকাল ৫টায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন জানান, মোট ৭১৩ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১২টি ভোট। বিজয়ী মাহফুজুর রহমান পেয়েছেন ৬৫৮ ভোট এবং বিজিত সৈকত রঞ্জন চৌধুরী পেয়েছেন ৪৩ ভোট।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির রাঙামাটি ইউনিটের নির্বাচনে জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগে তুলে ভোট শেষ হওয়ার তিনঘণ্টা আগেই নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সৈকত রঞ্জন চৌধুরী।

জালভোট দেওয়ার প্রতিবাদ করায় নির্বাচন চলাকালে তার উপর হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।