নেত্রকোণায় বিএনপি নেতাকে আ. লীগের মনোনয়ন

নেত্রকোণায় তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে বিএনপি নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

লাভলু পাল চৌধুরী নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2018, 12:53 PM
Updated : 29 March 2018, 06:32 AM

মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি থাকার সময় আবুল কালাম এই মনোনয়ন পান; যার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সামিয়া সুলতানার কর্মী-সমর্থকসহ হিন্দু ভোটারদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

ইউনিয়নটিতে বৃহস্পতিবার উপনির্বাচন হওয়ার কথা। গত ১৩ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম মুরাদ মারা গেলে চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়।

কালামের মনোনয়ন প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফুর রহমান রতন বলেন, “ওই ইউনিয়নটির উন্নয়নে যোগ্যতার প্রশ্নে আবুল কালাম সেরা। তাই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”

আওয়মী লীগ নেতার এই বক্তব্যে হতাশা ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, “আমরা সাতজন মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের লোক। লতিফুর রহমান রতন বলেছিলেন, এই সাতজনের মধ্য থেকেই মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখলেন না। তিনি যদি দলের ভালো চাইতেন তাহলে এই হীন কাজ করতে পারতেন না।”

ঢাকা মহানগর উত্তর ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক রিকু খানও এমন হতাশার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “গত ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমরা সাত প্রার্থী পাঁচ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিই। আমাদের কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি নেতাকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় সবাই হতবাক হয়েছি।”

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে লড়ছেন সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মুরাদের স্ত্রী সামিনা সুলতানা।

তিনি বলেন, “আমার স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর লতিফুর রহমান রতনের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন তোমার স্বামী মারা গেছেন। তুমি বাড়ি যাও। তোমার চিন্তা আমার। কিন্তু আমার স্বামী মারা যাওয়ার মাত্র ৪০ দিনেই সবাই সবকিছু ভুলে গেল। আমার স্বামী দলের জন্য কি না করেছেন।”

সামিনা অভিযোগ করেছেন, “আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কালাম বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আমার সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় গিয়ে তাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। অনেক ভোটারদের মারধরও করেছেন। পেশিশক্তি ব্যবহার করছেন তিনি।”

তবে কালাম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিএনপির নেতা থাকার সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেওয়ার বিষয়ে কালাম বলেন, “ভাই আমাকে ছেড়ে দেন। এখন এই বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেওয়ার পর কালামকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আ ক ম শফিকুল হক বলেন, “কালাম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাকে সহ-সভাপতির পদ ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি পদত্যাগপত্র করেননি।”

এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সামিনা সুলতানা আর আওয়ামী লীগের আবুল কালাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ইউনিয়নটিতে পুরুষ ভোটার ছয় হাজার ৯৯৭, আর নারী ভোটার ছয় হাজার ৭৯৭ জন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ৯টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাহী হাকিম, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি জানান।