ফেনীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত’ নিহত, স্বজনের দাবি হত্যা

ফেনীর ফুলগাজীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক যুবক নিহত হয়েছেন, যাকে ডাকাত বলছে পুলিশ।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2018, 07:04 AM
Updated : 17 March 2018, 07:28 AM

ফুলগাজী থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার জিএমহাট ব্রিকফিল্ডের কাছে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় আরও দুই ‘ডাকাত’ গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশের নয় সদস্য আহত হন বলে জানান ওসি।

তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, মাটি ব্যবসার বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর মদদে সাইফুলকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে।

নিহত কাজী মো. এমরান হোসেন সাইফুল (২৮) ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের কাচারি বাজারের সৌদি আরব প্রবাসী কাজী মো. হানিফের ছেলে।

ওসি হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি সাইফুলকে গ্রেপ্তারের জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় জিএমহাট এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপর হামলা করে তিনি পালিয়ে যান।

“হামলায় পুলিশ কনস্টেবল আবুল খায়ের (৪৫) গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেছে।”

ওসি বলেন, পরে রাতেই আবার অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে পুলিশ সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গভীর রাতে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যায় পুলিশ।

আহতরা পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

“এ সময় জিএমহাট ব্রিকফিল্ডের কাছে গেলে সাইফুলের সহযোগীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে সাইফুলসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পুলিশের নয় সদস্য আহত হন।”

ওসি জানান, আহতদের উদ্ধার করে ফেনী জেলা সদর হাসাপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি বন্দুক, দুটি কার্তুজ, ছয়টি ছোরা, চারটি রামদাসহ বেশকিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে জানান ওসি।

সাইফুলের সহযোগী আহত গাজী এমদাদুল হক ও ইউনুস মিয়া পুলিশ পাহারায় ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।

ওসি আরও বলেন, হামলায় আহত পুলিশ সদস্যের মধ্যে ফুলগাজী থানার এসআই মোশারফ হোসেন, এসআই রাশেদুল কবির, এসআই আইয়ুব খান, এএসআই শফিকুর রহমান, কনস্টেবল প্রদীপ কুমার চাকমা, কনস্টেবল ফারুক মিয়া, কনস্টেবল আবুল কাশেম, কনস্টেবল চন্দ্রিকা ত্রিপুরা ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল ও ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান। 

এদিকে নিহতের ভগ্নিপতি মো. হারুনুর রশিদের ভাষ্য, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে সাইফুলকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাত ৩টার দিকে জিএমহাট ব্রিকফিল্ডের পাশে সাইফুলের মাথায় গুলি করে হত্যা করে এবং শনিবার ভোরে লাশ হাসপাতাল মর্গে রেখে যায়।

আহত দুইজনের মধ্যে গাজী এমদাদুল হক পিকআপ চালক ও ইউনুস রাজমিন্ত্রীর কাজ করে। পুলিশ তাদের পায়ে গুলি করেছে বলেও রশিদের দাবি। 

নিহতের চাচা কাজী শাহ আলম বলেন, মাটি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জিএমহাট এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সাইফুলের বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে ওই প্রভাবশারীদের মদদে পুলিশ সাইফুলকে ডাকাত সাজিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালায়।

জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সাইফুলের নামে থানায় একটি মামলা থাকলেও ডাকাতির কোনো মামলা ছিল না বলেও জানান শাহ আলম।