সেই দুই মারমা কিশোরী এখন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে

রাঙামাটির সাম্প্রতিক আলোচিত দুই মারমা কিশোরী হাসপাতাল ছাড়ার পর এখন রয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 02:10 PM
Updated : 19 Feb 2018, 08:58 PM

দুই মেয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই তাদের বাবা-মাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিলাইছড়ির আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অভিলাষ তংচঙ্গ্যা।

হাই কোর্টের নির্দেশে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির হাসপাতাল থেকে দুই কিশোরীকে বাবা-মার জিম্মায় দেয় পুলিশ।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “মেয়ে দুটি আদালতের নির্দেশনার পর নিজেদের পিতামাতার সাথে চলে গেছে।”

তবে পরে জানা যায়, রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের ১ নং পাথরঘাটায় অভিলাষ তংচঙ্গ্যার বাসায় রয়েছে দুই কিশোরী।

অভিলাষ তংচঙ্গ্যা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়ে দুটিকে হাসপাতাল থেকে তার বাবা-মা আমার বাসায় নিয়ে এসেছে। যেহেতু একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি মেয়ে দুটিকে পিতা-মাতার কাছ থেকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যেতে চায়, তাই তারা নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমার বাসায় আছে।”

পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হলে তারা নিজেদের বাড়িতে চলে যাবে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতা।

হাসপাতাল থেকে চাকমা রানি য়েন য়েন দুই কিশোরীকে তার জিম্মায় নিতে চেয়েছিলেন।

চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের মারমা স্ত্রী য়েন য়েন বলেছিলেন, বাংলা ভাষা না জানা তার গোত্রের মেয়ে দুটি তার সঙ্গেই থাকতে চান।

এনিয়ে চাকমা রানির সঙ্গে আইনশঙ্খলা বাহিনীর বিতণ্ডাও হয়েছিল সেদিন। রানি য়েন য়েনের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ১৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সাবারাং রেস্তোয়াঁয় সংবাদ সম্মেলনও করেন একদল পাহাড়ি।

বিলাইছড়ির ওরাছড়ি গ্রামের উত্তর পাড়ায় এই দুই মারমা কিশোরীকে গত ২২ জানুয়ারি রাঙামাটিতে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তার আগের দিন তারা ধর্ষিত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে পাহাড়িদের মধ্য থেকে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়। ওই সময় ওই এলাকায় টহলরত একজন আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

হাসপাতালে দুই কিশোরীকে ভর্তি করার পর সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি উষাতন তালুকদার, চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় এবং তার স্ত্রী য়েন য়েন গিয়ে মেয়ে দুটিকে তাদের জিম্মায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। ফলে মেয়ে দুটির পাহারায় পুলিশ বসিয়েছিল প্রশাসন, যা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল।

১৩ ফেব্রুয়ারি নিজের মেয়েদের হাসপাতাল থেকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার জন্য হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মেয়ে দুটির বাবা। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের আদালত মেয়ে দুটিকে বাবা-মার জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গত ২৪ জানুয়ারি মেয়ে দুটির বাবা মাকে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আনা হয়। তারা নিজেদের ভাষায় বক্তব্যে দাবি করেন, মেয়ে দুটিকে নিয়ে ‘রাজনীতি হচ্ছে এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে’।

মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে

দুই কিশোরীকে হাসপাতালে আনার পর তাদের প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. হেনা বড়ুয়াকে প্রধান করে ডা. উৎপল বর্ণ চাকমা এবং ডা. সায়মা জাহান আনাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন ৩১ জানুয়ারি রাঙামাটির সিভিল সার্জনকে দিয়েছে।

সিভিল সার্জন প্রতিবেদনটি আদালতে পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শওকত আকবর।

প্রতিবেদনে কী আছে- জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, “রিপোর্ট আদালতের কাছে আছে।”