শাবিতে চুরি, ছিনতাই: প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অব্যাহত চুরি ও ছিতাইয়ের ঘটনায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2018, 03:05 PM
Updated : 21 Jan 2018, 03:05 PM

রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুইদিনের সময় বেঁধে দেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধমেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তোপের মুখে পড়েছেন।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী কাসিব মুন্না বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুইদিন সময় দিয়েছি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামব।”

গেল বছর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অটোরিকশায় উঠে অন্তত ৮০ জন শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ক্যাম্পাসের মধ্যে অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক শিক্ষার্থী দুপুরে ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন এবং ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম হন। 

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় কোহেলি আক্তার নামের এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে চলে যায় এক ছিনতাইকারী।

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা হলে ছাদের গ্রিল কেটে চোর ঢুকে চারটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।

৩২০ একরের ক্যাম্পাসে চারদিকে কোনো সীমনা প্রাচীর নেই। এ কারণে সহজেই ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়া য়ায়।

বিভিন্ন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

সমাবেশে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের শিক্ষার্থী মনি আক্তার বলেন, “আমরা নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরের কাছে আবেদন করেছিলাম। প্রক্টর আমাদের উল্টো প্রশ্ন করলেন- আমি তোমাদের কী ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারি? একজন প্রক্টর জানেন না তিনি তার শিক্ষার্থীদের কীভাবে নিরাপত্তা দিবেন। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে!”

এই শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাত ৪টায় চুরির ঘটনা ঘটল; প্রভোস্ট আসলেন দুপুর ১২টায়। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি কীভাবে হলের প্রভোস্ট হন তা বোধগম্য নয়।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইবুকেও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

মেহের উদ্দিন হিমেল নামের এক শিক্ষার্থী ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “শাবি ক্যাম্পাস চোরদের অভয়ারণ্য; যেখানে গেলে চোরের সাক্ষাৎ মিলে। প্রশাসনের কি একটুও লজ্জা লাগে না? ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাই বন্ধ করতে না পারেন, এটলিস্ট মেয়েদের হলগুলোতে প্রটেকশন দিন। প্রশাসনের একটু হলেও জাগা উচিত।”

জান্নাতে নাইমে জুই নামের এক শিক্ষার্থী ফেইবুকে লিখেন, “এতকিছুর পরও প্রশাসন এটাকে সাধারণ চুরির আওতায় ফেলতে পারে না। অথচ প্রক্টর, প্রভোস্ট বলছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বাসাবাড়িতেও হয়’। এসব ঘটনা একদিনের আউটকাম নয়, প্রশাসনের দীর্ঘ দিনের অবহেলার আউটকাম।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য সাজিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে ক্যাম্পাসে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে; অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নিরাপত্তার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন শতভাগ নৈতিক।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ রুদ্র বলেন, ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ করা হলেও অহরহ ঘটে যাওয়া চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাউকে ধরতে পারে না প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন নৈতিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন, তখন তাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ডেকে নেওয়া হয়।

“শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারল না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট শরিফা ইয়াসমিনের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ব্যাপারে তৎপরতা চালাচ্ছি। অথচ শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় অ্যাড্রেস না করে উল্টো আন্দোলনে নামছে।”

তিনি বলেন, ছাত্রী হলের নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানো হয়েছে। চারিদিকে ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িতদের তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।