শেরপুরের কৃষকের নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন

এক যুগের প্রচেষ্টায় নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন শেরপুরের এক কৃষক, যার ধান গবেষণায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

শেরপুর প্রতিনিধিমো. আব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2018, 11:01 AM
Updated : 20 Jan 2018, 11:01 AM

একক প্রচেষ্টায় বিলুপ্ত জাতের আমন ধান ও বিআরআরআই ধান পরাগায়নের মাধ্যমে ১৯ ধরনের দেশীয় নতুন জাতের আমন ধান উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষক সেন্টু কুমার হাজং।

আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের জন্য দেশি বিলুপ্ত জাতের ৩৫ ধরনের ধান বীজ সংরক্ষণ করে চলেছেন তিনি। শেরপুরের বাইরের অনেক কৃষক তার উদ্ভাবিত ধান বীজ নিয়ে চাষাবাদ করে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। বোরো জাতের চারটি ধান নিয়েও গবেষণা করছেন তিনি।

নালিতাবাড়ীর নয়াবিল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চাটকিয়া গ্রামে বাড়ি সেন্টু হাজংয়ের। ধান গবেষণা বিষয়ে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এসএসসি পাস করার পর তিন বারের প্রচেষ্টায়ও এইচএসসির গণ্ডি পার হতে পারেননি।

সেন্টু কুমার হাজং জানান, ২০০৫ সালে একটি বেসরকারি সংগঠনের পাহাড়ি দরিদ্র কৃষকদের ‘জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন তিনি। সেখানে ফিলিপাইনের একজন ধান গবেষক বিভিন্ন এলাকার ১৬ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেন।

সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধান সৃষ্টি করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিন্তু দমে যাননি বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রতি বছর পরীক্ষামূলকভাবে মাটির টবে ধান পরাগায়ন করে উৎপাদনের পর সেই বীজ সংরক্ষণ করতেন। সেই বীজ পর্যায়ক্রমে চাষবাদ করে ১৯ প্রকারের আমন ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।

গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য দেশি বিলুপ্ত জাতের ৩৫ প্রকারের আমন ধানের বীজ তার সংরক্ষণে রয়েছে বলে জানান এ কৃষক।

সেন্টু হাজং বলেন, উদ্ভাবিত জাতগুলো খুবই আবহাওয়া সহিষ্ণু। একেকটা জাত বিভিন্ন সময়ে পাকে। এরমধ্যে কতগুলো ১১০ দিনে, কতগুলো ১২০ দিনে, কতগুলো ১৩০ দিনে বা ১৩৫ দিনে পাকে।

তার উদ্ভাবিত ১৯ জাতের ধানের মধ্যে সাতটি ধানের নামকরণ করা হয়েছে; সেগুলো হচ্ছে- সোনালু, সেন্টু গোল্ড-৫, মেরীগোল্ড, রানী শাইল, রূপাশাইল, সেন্টুশাইল ও বিশালী বিন্নি।

উপজেলার জোকেরকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম, রূপারকুড়া গ্রামের কৃষক খুরশেদ আলী মেম্বার এবং চাটকিয়া গ্রামের সতেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, এবছর আমন মৌসুমে সেন্টুশাইল ধান ও সেন্টু গোল্ড-৫ ধান আবাদ করে প্রতিকাঠা জমিতে দুইমণ করে ধান পাওয়া গেছে । সারও তুলনামুলক কম লাগে ।

উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.ইউনুস আলী দেওয়ান বলেন, “সেন্টু হাজং ইউনিয়নের চাটকিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধান নিয়ে গবেষণা করে তিনি ১৮টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফ ইকবাল বলেন, সেন্টু হাজং মূলত স্থানীয় জাতগুলো নিয়ে কাজ করছেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক তেমন শিক্ষা নেই। কারিতাস থেকে অল্প কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের আগ্রহে কাজটি করে যাচ্ছেন।

“তিনি বেশকিছু ধান জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন। কিছু আমি দেখেছিও।যদি গবেষণাগার থেকে তাকে সহযোগিতা করা যায় তাহলে আমাদের নতুন জাত পেতে অথবা স্থানীয় জাতগুলোকে আরও উন্নয়ন করার ক্ষেত্র সহজ হবে।”