ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু শিগগির: পানিসম্পদ মন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা নিরসনে শিগগির কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2017, 12:40 PM
Updated : 15 Oct 2017, 12:40 PM

নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

“সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৯ সালের মধ্যে তা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়ায় কাজটি স্বচ্ছ ও মানসম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।  

তবে স্বল্প সময়ে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে অতিরিক্ত পাম্প বসানোর আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৫৬০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৩ হাজার ২৬১ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন অতিরিক্ত দুটি পাম্প স্টেশন, পানি নিষ্কাশন ক্যানেলগুলো অবৈধ দখলমুক্ত ও সংস্কারে ব্যয় হবে বলে জানান মন্ত্রী।

বাড়ি ও শিল্প কারখানা থেকে পানি মূল ক্যানেলে যাতে যেতে পারে সেজন্য এই প্রকল্পের কাজের সঙ্গে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে তাদের ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ ডিএনডিবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, ডিএনডি মূলত একটা সেচ প্রকল্প ছিল। এটা আবাসিক ও শিল্প এলাকা হওয়ার কথা ছিল না। ১৯৬২-৬৮ সালে ডিএনডি সেচ প্রকল্প হয়। বর্ষাকালে ডিএনডির বাঁধের অভ্যন্তরে জমে থাকা নিষ্কাশনের জন্য ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসানো হয়েছে। সে সময়ের পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্পগুলো যথেষ্ট ছিল। সময়ের বিবর্তনে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের হওয়াতে এক সময় ডিএনডিতে আবাসিক ও শিল্প এলাকায় রূপান্তরিত হয়।

অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি ও শিল্পকারখানা নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন পথগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এখানে শিল্প কারখানায় পানির ব্যবহার বেড়েছে এবং পানির পাম্প যেগুলো ছিল সেগুলোর কার্য ক্ষমতা কমে গেছে। এর মধ্যে তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প বিকল হয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “আমরা যে প্রধান ক্যানেল থেকে পানি নেই, সেই ক্যানেলে বিভিন্ন স্থান থেকে পানি এসে জমা হয় এবং নিষ্কাশন করে পানি ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু পানি নিষ্কাশন খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় মূল ক্যানেলে পানি যেতে না পেরে জলাবদ্ধতা হয়।”

এ সমস্যাটি নিরসনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে সাংসদ শামীম ওসমান তাদের বার বার বলছিলেন উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, “আমরা তখন তাকে বলেছি এটি রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের কাজ; কিন্তু তারা রাজী হয়নি। তখন শামীম ওসমান আবার আমাদেরকে করে দেওয়ার জন্য বললেন।”

ডিএনডির যে অংশটুকু সিটি কর্পোরেশনের নয় সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান মন্ত্রী।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম বিরু, সাংসদ শামীম ওসমান, আবু হোসেন বাবলা, সাংসদ সানজিদা খাতুন, হোসনে আরা বাবলী, লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, পুলিশ সুপার মঈনুল হক প্রমুখ।

মন্ত্রীর বক্তব্যের আগে শামীম ওসমান বলেন, ডিএনডি বাঁধের ভেতরে ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে। এই ডিএনডির ভেতর দেড় হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে।

“আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, হয় ডিএনডিবাসীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে, না হয় আমাকে পদত্যাগ করতে হবে।”

পরে পরিকল্পনা মন্ত্রী নারায়ণগঞ্জে এসে জলাবদ্ধতা দেখে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ডিও দেন বলে জানান শামীম ওসমান।

এ সমস্যাটি নিয়ে বার বার লেখার জন্য শামীম ওসমান গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।

কাজটির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম বিরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।