ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিমের ছেলে আরিফ কিশোরগঞ্জের ব্রিজঘাট পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। গত রোববার রাতে ভৈরবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়।
সোমবার রাত ৯টার দিকে ময়মনসিংহের খাগড়হরের মদিনানগর গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দ্ফন করা হয় আরিফকে।
বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই শরীফুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম ও মা মমতাজ বেগমকে নিয়ে ছিল আরিফের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন শোকের পাশাপাশি তাদের মনে ভবিষ্যতের শঙ্কা।
মমতাজ বেগম বলেন, “আমার মেজ ছেলে আরিফ মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিল। ছোটবেলা থেকে মানুষের আপদে বিপদে এগিয়ে গেছে। এটাই তার জন্য কাল হল।”
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পার হওয়ার সময় ডালিম নামে এক পরিবহন শ্রমিকের পথরোধ করে কয়েকজন ছিনতাইকারী। তার চিৎকার শুনে আরিফ এগিয়ে গিয়ে ছিনতাইকারীদের ধরার চেষ্টা করেন।
এ সময় ছিনতাইকারীরা আরিফকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে ও ডালিমকে উদ্ধার করে ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
মমতাজ বলেন, “আরিফের বেতনের টাকা দিয়েই আমাদের সংসার আর দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ চলত। এখন কীভাবে আমার ছেলেরা পড়াশোনা করবে? কে সংসার চলাবে?”
তার বাকি দুই ছেলের মধ্যে শরীফুল উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। আর শহীদুল পড়ছেন সপ্তম শ্রেণিতে।
শরীফ বলেন, “ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল আমরা ভালো করে পড়াশোনা করে দেশ সেবায় বাবার মত হব। আজ ভাইয়ের স্বপ্ন এবং আমাদের পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে। সরকার যদি আমাদের এখন না দেখে তাহলে আমরাও প্রাণে মারা যাব।”
আরিফের খুনিদের পুলিশ এখনও চিহ্নিত করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শরীফ।
মদিনানগরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, বাবার মৃত্যুর পর গত বছর অক্টোবরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশের চাকরি পান আরিফ।
“ভিটেমাটি ছাড় তাদের আর কিছুই নেই। আরিফের মৃত্যুতে বড় ধরনের বিপদে পড়ে গেছে ওই পরিবার।”
আরিফের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।