একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম জানান, সকালে মনোয়ারা বেগমের পাঁচ ছেলেকে ডিআইজি অফিসে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
“এছাড়া প্রতিষ্ঠিত সন্তানদের মা কেন অবহেলার শিকার হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান প্রামাণিককে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ডিআইজি বলেন, “তদন্তে সন্তানদের বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ মিললে বৃদ্ধা মা চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। এছাড়া তার চিকিৎসাসহ জীবনকালীন সকল ব্যয় পুলিশ বহন করবে।”
ডিআইজি জানান, কয়েক মাস আগে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙ্গেছে মনোয়ারা বেগমের। বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বরিশালের বাবুগঞ্জের ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী সরদারের সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
তাদের ছয় সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ফারুক হোসেন পুলিশের সবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার, মেজ ছেলে জসিমউদ্দিন পুলিশের কনস্টেবল, ছোট ছেলে নেছারউদ্দিন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক।
অপর দুই ছেলের মধ্যে শাহাবউদ্দিন ব্যবসায়ী ও গিয়াসউদ্দিন ইজিবাইক চালক। একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ভূতেরদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার রায় জানান, সোমবার অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে স্থানীয় একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে বলা হয়, বাবুগঞ্জের ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী মারা যান ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর। জীবদ্দশায় ছয সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন।
অথচ ছয় সন্তানের কেউই মায়ের দায়িত্ব নেয়নি। ফলে তাকে দ্বারে দ্বারে ‘ভিক্ষা করে’ টিকে থাকতে হচ্ছে বলে ওই সংবাদে বলা হয়।
ইউএনও বলেন, সংবাদটি স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু সুলতানের নজরে এলে তিনি মনেয়ারা বেগমকে চিকিৎসার জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেন।
এরপর সোমবারই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে ইউএনও জানান।
এছাড়া মাকে অবহেলা করার অভিযোগে স্কুল শিক্ষিকা মেয়েকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ইউএনও দীপক কুমার রায়।
এ ব্যাপারে মনোয়ারা বেগমের স্কুল শিক্ষিকা মেয়ে মরিয়ম সুলতানা বলেন, তিনি এবং তার দুই ভাই জসিম ও গিয়াসই মায়ের খোঁজ-খবর রাখেন। বাকি তিন ভাই কোনো খবর রাখেন না।
“তারা ঢাকা থাকেন। মাঝে মধ্যে বাড়ি এসে বাবার সম্পত্তিতে থাকা গাছ কেটে নিয়ে যান। বাধা দিতে গিয়ে গিয়াস একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে।”
তবে তার মা ভিক্ষা করেন না বলে দাবি মরিয়মের।
একই দাবি করে পুলিশ কনস্টেবল ছেলে জসিমউদ্দিন বলেন, “মা কখনও ভিক্ষা করেননি। বয়সের কারণে অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তাই অনেক সময় কাউকে কিছু না বলে অন্যের বাড়ি চলে যেতেন।”
এদিকে, মনোয়ারা বেগমের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন বরিশাল রেঞ্চের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। তারা বৃদ্ধার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং সহায়তা দিয়েছেন।
হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ডিআইজি শফিকুল ইসলাম ১৫ হাজার টাকা, জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ১২ হাজার টাকা এবং পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাকে।