জটিল রোগে আক্রান্ত মুক্তা এখন ঢাকা মেডিকেলে

সাতক্ষীরায় চিকিৎসার অভাবে ১২ বছরের এক শিশুর শরীর শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি একটি হাত ফুলে যাচ্ছে, যাতে দিন দিন দুর্গন্ধ বাড়তে থাকায় পরিবারটি একঘরে হয়ে পড়েছে।

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন সাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2017, 05:42 AM
Updated : 11 July 2017, 05:42 AM

সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে মুক্তামনির এ রোগটি বিরল বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসিরউদ্দিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এ রোগটিকে হাইপারকেরাটসিস বলা যেতে পারে। এটি স্কিন ক্যান্সারও হতে পারে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এর চিকিৎসা সম্ভব।

মঙ্গলবার সকালে মুক্তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তৌহিদুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতায় সোমবার রাতে তাকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়।

ইব্রাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেড় বছর বয়সে মুক্তার ডান হাতে একটি ছোট গোটা দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে থাকে। বছর চারেক আগে এমন পর্যায় যায় যে তার স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।

“আক্রান্ত হাতটি তার দেহের চেয়ে ভারি হয়ে উঠেছে। আর শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। সে সব সময় যন্ত্রণায় অস্থির থাকে। ডাক্তার বলছেন, রোগটি তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।”

ইব্রাহিম সাতক্ষীরা-খুলনার অনেক হাসপাতালে গিয়েছেন জানিয়ে বলেন, সবাই চিকিৎসা দিয়েছে, কিন্তু রোগ ভালো হয়নি।

“এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। সঠিক চিকিৎসা পাইনি।”

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর সকালে চিকিৎসক সামন্ত লাল সরকার দেখেছেন বলে তিনি জানান।

ঢাকা যাওয়ার আগে মুক্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিল, “ফোলা হাতটি সব সময় শুধু চুলকায় আর যন্ত্রণা করে। বেশি গরমেও বাড়ে, বেশি ঠাণ্ডায় বাড়ে। বাড়ির বাইরে যেতে পারিনা। স্কুলে যেতে পারি না । খেলতে পারি না। আমার কোনো আনন্দ নেই।”

তাকে নিয়ে পরিবারটি মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছে।

মুক্তার মা আয়েশা খাতুন বলেন, “মেয়ের কষ্ট দেখতে পারি না। ওর সারাদেহে পোকার কামড়ের যন্ত্রণা। ঈদে নতুন জামা পরাতে পারিনি। মেধাবী মেয়ে। সুরেলা গলায় গজল গায়, গান গায়।

“হাত থেকে দুর্গন্ধের কারণে গ্রামের লোকজন এমনকি আত্মীয়স্বজনও আর আমাদের বড়ি আসে না।”

মুক্তার দাদা এজাহার আলী গাজী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বছর চারেক আগে রোগটির মাত্রা বেড়ে যায়। কালে কালে বন্ধ হয়ে যায় তার চলাফেরা, স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা।

“এখন বসতে পারে না। দাঁড়াতে পারে না। হাঁটতেও পারে না সে। দিনরাত কেবল শুয়ে কাটাতে হয়।”

মুক্তার জমজ বোন হীরামনি ও আল আমিন নামে এক বছরের একটি ভাই রয়েছে।