পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এই গতিতে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন জানান, গঙ্গার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেইটের সবগুলোই খুলে দিয়েছে।
এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে বলে জানান তিনি।
হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেখান থেকে নদীটির নাম হয়েছে পদ্মা।
ভাটির দিকে ২৫৮ কিলোমিটার এগিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে এসে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে পদ্মা। সেই মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরও ১২০ কিলোমিটার এগিয়ে চাঁদপুরে এসে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে। পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে পৌঁছেছে বঙ্গোপসাগরে।
গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারতের ফারাক্কা বাঁধ; যা চার দশক ধরে নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে বাংলাদেশের জন্য।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টাপর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা পাঙ্খা পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, রাজশাহী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই তিন পয়েন্টে বিপৎসীমার যথাক্রমে ১৫, ২০ ও ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল পদ্মা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, “এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শনিবার রাতে তা বিপৎসীমা (১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করতে পারে।”
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হকও একই কথা বলেছেন।
“যেভাবে পানি বাড়ছে এই ধারা চলতে থাকলে পদ্মা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা গড়াই নদীতেও পানি বাড়ছে।”
এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী মহানগরীর কয়েকটি এলাকায় পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ইতোমধ্যে বুলনপুর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্পের চারটি স্থান সামন্য দেবে গেছে। বাঁধের ভেতরে কিছু নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে; পানি উঠেছে ঘর বাড়িতেও।
মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, বুলনপুর পুলিশ লাইনসের সামনে যে দুটি স্থানে পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্প সামান্য দেবে গেছে, তার পাশেই শহর রক্ষা বাঁধ। দেবে যাওয়া অন্য দুটি জায়গা শহর রক্ষা বাঁধ থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে।
“পুলিশ লাইনসের সামনে তীর রক্ষা প্রকল্পে ধস নামলে শহর রক্ষা বাঁধে প্রভাব পড়তে পারে। আপাতত পাথর ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছে। এছাড়া উপরের মাটি যেন সরে না যায়, সেজন্য ফেলা হয়েছে বালির বস্তা।”
তবে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি কমার প্রবণতা আগামী ৭২ ঘণ্টা এবং মেঘনা অববাহিকার সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাসের প্রবণতা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
এসব নদীর পানি কমতে থাকায় ‘বড় ধরনের’ বন্যার ঝুঁকি দেখছেন না বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ার বিষয়টি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। তবে খোলা থাকলেও এর অস্বাভাবিক প্রভাব আমরা দেখতে পাইনি। এখন পদ্মায় পানি বাড়ছে, আবার যমুনায় পানি কমছে। এ সময়ে যে ‘স্বাভাবিক বন্যা’ পরিস্থিতি থাকে তা-ই হবে এখানে।”
তিনি বলেন, বিহারের পাটনায় গঙ্গায় ১৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।
“বাংলাদেশে পদ্মায় গত ১৩ অগাস্ট থেকে পানি বাড়ছে; তার হারও কমছে। আগামী তিন দিন বাড়লেও পানি বিপদসীমার কাছাকাছি যেতে পারে কয়েকটি পয়েন্টে।
“স্বাভাবিক বন্যার মতো কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, পাবনা অঞ্চলে পানি বাড়তে পারে; বেশি খারাপের আপাতত শঙ্কা নেই।”