রংপুরের মৌবন হোটেলে হরিজন সম্প্রদায়ের ‘খাওয়া নিষেধ’

এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা।

আফতাবুজ্জামান হিরুরংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 10:53 AM
Updated : 3 Oct 2022, 10:53 AM

রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলে অন্ত্যজ শ্রেণি হরিজন সম্প্রদায়ের এক স্কুল শিক্ষার্থীকে খেতে না দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে; যাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই সম্প্রদায়ের নেতারা।

এ ব্যাপারে হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা ‘জাতিগত বর্ণবৈষম্যের’ অভিযোগ এনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক (তদন্ত) হোসেন আলী।

সোমবার তিনি বলেন, “শনিবার রাতে আমাদের কাছে এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাচারী বাজার এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র জীবন বাসফোর মৌবন হোটেলে নাশতা খেতে যায়। এ সময় হোটেলের ব্যবস্থাপকসহ কয়েকজন কর্মচারী জীবনকে হোটেল থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেন। সেই সঙ্গে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের এই হোটেলে খাওয়া নিষেধ আছে বলে জীবনকে গালাগাল করেন তারা।

একপর্যায়ে হোটেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম হোটেলের প্যাডে ‘এই হোটেলে খাওয়া নিষেধ সুইপারের’ লিখে সই দিয়ে জীবনের হাতে ধরিয়ে দেন। তারপরই থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

হরিজন সম্প্রদায়ের নেতা সুরেশ বাসফোর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হরিজনদের কেউ নোংরা অবস্থায় যদি হোটেলে খেতে চায়, তাদের বাধা দিতে পারে। কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি ছেলে পরিষ্কার অবস্থায় হোটেলে খেতে গিয়েছিল। তাকে গালাগাল করে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে।”

“যেখানে আমাদের সংবিধান সব মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ দেশের সংবিধান তথা আইন লঙ্ঘন করেছে। সেই সঙ্গে হোটেলের প্যাডে আমাদের ‘সুইপার’ বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচার চাই। শারদীয় দুর্গা উৎসবের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না পাই, তবে পূজার পর আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মৌবন হোটেলের সুপারভাইজার আতিকুল ইসলাম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আমাদের প্যাডে যে লিখিত দিয়েছি তার কারণ হলো, তারা এসে হোটেলের ভিতরের টেবিল-চেয়ারে বসে খেতে চায়। তার কারণে এই লেখাটা দেওয়া হয়েছে।“

হোটেলের আরেক সুপারভাইজার মোস্তফা বলেন, “সুইপাররা হোটেলে এসে চেয়ার-টেবিলে বসে খেতে চায়; তাই তাদের নিষেধ করা হয়েছে। কিন্ত বাইরে খেতে নিষেধ নাই তাদের।”

হোটেলের প্যাডে হরিজনদের খাওয়ায় নিষেধের বিষয়টি মৌবন হোটেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব হোসেনও স্বীকার করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হোটেল কর্মচারীদের সঙ্গে হরিজন সম্প্রদায়ের একটি ছেলের কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।”

এ ব্যাপারে রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের রংপুর প্রতিনিধি মাহবুবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হরিজনরাও তো মানুষ। মানুষ হিসেবে তাদেরও অধিকার আছে। তবে তারা যাতে সামাজিকভাবে হোটেলে খাওয়ার স্বীকৃতি পায় সেটির ব্যবস্থা করা উচিত বলে আমি মনে করি।”

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রংপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুল আলম কল্লোল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক কথায় এটা মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছে। মৌবন হোটেল কর্তৃপক্ষ যেটা করেছে সেটা কখনও করা ঠিক না।“

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কারো মৌলিক অধিকার ‘ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য’ করা যায় না।

সংবিধানের ২৮ (৩) ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।”