“বিক্ষুদ্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকেসহ তার সঙ্গে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে।”
Published : 06 Aug 2024, 08:58 PM
শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী চলমান সহিংস ঘটনায় সাতক্ষীরায় পৃথক দুটি ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও অন্তত ১২ জন।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা এবং সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাকনা গ্রামের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাহাজুর রহমান সাজুর ছেলে শেখ শাকের (২২), শেখ সুজাত আলীর ছেলে শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), শেখ আরিফুল ইসলামের ছেলে শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন আলম (২২), একই গ্রামের শেখ আজুয়ার রহমানের ছেলে সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ওয়ারেজ আলী মোড়লের ছেলে আনাস বিল্লাহ (২১) ও একই ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের নুর হাকিম ঘরামীর ছেলে আদম আলী (২৩), হিজলিয়া গ্রামের ছাত্তার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (১৬) এবং সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের মৃত রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৬০), আওয়ামী লীগ কর্মী তৌহিদ ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী জাহিদ হোসেন ও ফারুক হোসেন।
গুলিবিদ্ধ আহতদের সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী বলেন, “সোমবার কয়েকশ’ বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের জাকির চেয়াম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইট পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে জাকিরের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি বাড়ির দোতালা থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়।
“এ সময় ক্ষুদ্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনাস বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর মারা যান। পরে তাদের মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুদ্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে রাত ৮টার দিকে তারা জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকেসহ তার সঙ্গে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে। ”
মঙ্গলবার সকালে নিহতদের মরদেহ সনাক্ত করা হয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান।
আশাশুনি থানার ওসি বিশ্বজিত অধিকারি জানান, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সদর হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দলবদ্ধ শত শত মানুষ আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহমেদ হোসাইন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার রাত নয়টার দিকে মৃগাডাঙ্গা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে মৃগাডাঙ্গা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী তৌহিদ ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী জাহিদ হোসেন ও ফারুক হোসেন নিহত হন। বৈকারি ইউপির চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর ও কলারোয়া থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে একদল ব্যক্তি। এর আগে থানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তরা পৃথক পৃথক ভাবে থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে থানা ভবন। ভেতরে কক্ষ থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। থানার সকল দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এই সুযোগে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার হামলা লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সাতক্ষীরায় দুপুর পর্যন্ত দোকান-পাট, ব্যাংক, অফিস-আদালত খোলা ছিল। বাস না চললেও অন্যান্য যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে দুপুরে ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় বলে ভোমরা কাস্টমসের ডিসি এনামুল হক জানান।