‘উগ্র মেজাজি’ রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যত অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে রায়হান শরীফের পিস্তলের গুলিতে এক ছাত্র আহত হয়।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2024, 03:03 PM
Updated : 4 March 2024, 03:03 PM

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে প্রভাষক রায়হান শরীফের পিস্তলের গুলিতে এক ছাত্র আহত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ এনেছেন।  

সোমবার বিকালে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে পিস্তলের গুলিতে এক শিক্ষার্থী আহত হন। তার পায়ে গুলি লাগে। তারপরই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। খবর পেয়ে পুলিশ এসে শিক্ষক রায়হান শরীফকে হেফাজতে নেয়; তার পিস্তলটিও জব্দ করা হয়েছে। 

সন্ধ্যার পর আহত শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান তমালের (২২) পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তমাল কলেজের এমবিবিএস অষ্টম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে আটকে রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ গিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত করে। কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এবং শহরের দত্তবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত তমালের সহপাঠী শিক্ষার্থী আফিয়া বলেন, “বিকালে সাড়ে ৩টার দিকে আমাদের শিক্ষক রায়হান শরীফ ক্লাসে মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি আমাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের কারও কি পোষা পাখি আছে? আমার একটা পোষা পাখি আছে।

“এই বলে তিনি তার সঙ্গে থাকা একটি কালো ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আমাদের দেখিয়ে বলেন, এটা হচ্ছে আমার পোষাপাখি।”

আফিয়া বলেন, “এ সময় হঠাৎ করেই পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে তমালের পায়ে লাগে। আরেক শিক্ষার্থী লাবিবার কানের পাশ দিয়ে গেছে।”

এরপরই ক্লাস রুমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা হুড়োহুড়ি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটকে রাখেন। ওই সময় শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

আফিয়া জানান, লাবিবাকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

তমালের আরেক সহপাঠী শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, “স্যারের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়েছে। তিনি প্রতিনিয়ত ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর ইশারা করতেন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

রায়হান শরীফের সহকর্মী ও কলেজের ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, “শিক্ষক রায়হান শরীফ এর আগেও কলেজে পিস্তল নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর তাকে সর্তক করায় সে আমাকেও ভয় দেখিয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও হোস্টেলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদক অফার করারও অভিযোগ রয়েছে।

“কলেজের অধ্যক্ষ তাকে কয়েকবার বদলির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ডিজি অফিসকে ম্যানেজ করে সে বহাল তবিয়তে আছে।”

এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পিস্তল নিয়ে শিক্ষক রায়হান শরীফ কেন কলেজে আসেন? তার বিরুদ্ধে কেন আগে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। আজকের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কলেজের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।”

কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ওই শিক্ষকের মেজাজ উগ্র। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়ই তিনি রূঢ় আচরণ করেন। ক্লাস ও ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে আসায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।

Also Read: সিরাজগঞ্জে মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের পিস্তলের গুলিতে শিক্ষার্থী আহত

“আমিও তার বদলির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বেশ কয়েকটি চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”

অধ্যক্ষ বলেন, “আজকে অসময়ে ক্লাসে আসতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার বিতণ্ডার মধ্যে শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনায় আমি সত্যিই হতবাক হয়েছি। আমি অফিসের কাজে ঢাকায় এসেছি। সিরাজগঞ্জ ফিরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবারও অধিদপ্তরে লিখব।”

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হান্নান মিয়া বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের রোষানল থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটক করে কলেজের একটি কক্ষে রেখেছিলাম। সেখানকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাকে সদর থানায় নেওয়া হয়েছে।

“তার কাছ থেকে ৭.৫ বোরের একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। পিস্তলটি নিবন্ধিত কি না তা এখনও যাচাই করা যায়নি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে”, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা।