দলে বিতর্কিতরাই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে: আজমত

প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে রাজনীতির মাঠে থাকা আজমত উল্লা খান টানা ১৮ বছর টঙ্গী পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেও তৃতীয় নির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে দল আবার তাকেই বেছে নিয়েছে। ষাটের দশকের শেষভাগ থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত আজমত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর শ্রমিক আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শেষে এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের পাশাপাশি দলের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও আছেন।  প্রায় পৌনে ১২ লাখ ভোটারের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে টঙ্গীতেই রয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সেখানে জন্মগ্রহণকারী আজমত রাজনীতির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বইও লিখেছেন। কর্মক্ষত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আইন পেশার পাশাপাশি তিনি তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। আজমত উল্লা খান বরাবরই একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত। ২৫ মে নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুরে দলের বিভক্তি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 08:19 PM
Updated : 22 May 2023, 08:19 PM

এবারের নির্বাচনে মানুষের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেলেন, জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

একটি স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত সিটি গড়ার প্রত্যাশা নিয়ে গাজীপুরের জনগণ এবারের নির্বাচনটির জন্য অপেক্ষা করছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এবারের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী।

প্রথমবার নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য জাহাঙ্গীর ও তার সমর্থক নেতা-কর্মীদের দোষারোপ করেছিলেন, এবার তো সেই পরিস্থিতি বিদ্যমান- কিভাবে মোকাবিলা করবেন?

আমি নির্বাচন নিয়ে কাউকে কোনোদিনই দোষারোপ করিনি। আমি সব সময়ই বলেছি, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সুতরাং দোষারোপ করা এইটা আমার নীতিবিরুদ্ধ কাজ। তাই এ নির্বাচন নিয়ে আমি কাউকেই দোষারোপ করি না।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকেই আপনার পক্ষে মাঠে নামেননি, তারা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, এতে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হবে- এটা আপনার জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করেন?

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে নির্বাচনে নামেননি এ তথ্যটা একেবারেই সঠিক নয়। আপনার দেখেছেন, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, গোটা আওয়ামী লীগ পরিবার যেমন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠন, গাজীপুরে থাকা ১৪ দল এবং শান্তিকামী মানুষ সম্পূর্ণভাবে একজোট হয়ে আমার নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ধরনের বিভক্তি নেই। সব নেতাকর্মী একতাবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করছেন। সুতরাং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে নামেনি এটা একটা মিথ্যা রটনা। যেহেতু প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা আমার সঙ্গেই আছেন। তারা একযোগে আমার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। তাই আমার ক্ষতির কোনো কারণ নেই।

জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন-তারপরও দলের অনেক নেতা-কর্মীকে তার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, তার মায়ের প্রচার চালাচ্ছেন। কেন তারা সেখানে যাচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?

কোন নেতা? কোন সহযোগী সংগঠনের নেতা তার (জাহাঙ্গীর) সঙ্গে আছেন? যারা তার সঙ্গে আছেন তারা কিন্তু সবাই বিতর্কিত। কেউ মানুষকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন কারণে দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কিছু সংখ্যক লোক, যাদের চরিত্র সবাই জানেন। অপকর্মের কারণে যারা দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হয়েছেন তারাই তার সঙ্গে আছেন। এ থেকে বুঝা গেছে অপকর্মের মদদদাতা কে ছিলেন। আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি নেই। এতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং যারা আওয়ামী লীগে থেকে অপকর্ম ও দুর্নীতি করে জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে; সেই লোকগুলো দল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরে জনগণ অ্যাপ্রিসিয়েট করেছে। এখন জনগণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন, তাদের ভোগান্তি দিবে এরকম লোক আর আওয়ামী লীগে নেই। সুতরাং জনগণ যেমন ঐক্যবদ্ধ, আমাদের নেতা-কর্মীরাও তেমন ঐক্যবদ্ধ।

জাহাঙ্গীরের পক্ষে থেকে যেসব নেতা তার মায়ের জন্য কাজ করছেন, তারা জানেন বহিষ্কার হবেন- রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা আপনাকে কেন ছেড়ে গেলেন?

দল যদি কেউ করেন আর দলের বিপক্ষে যান, তাহলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে। প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তারা দলের গঠনতন্ত্রের বাইরে যাবেন না। তারা দলের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলবেন এটাই স্বাভাবিক। দলের কোনো স্তরে কোনো নেতাকর্মীর মধ্যেই কোনো বিভক্তি নেই। আমি আগেই বলেছি, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হয়েছে এরকম গুটি কয়েক লোক তার (জাহাঙ্গীর) সঙ্গে আছেন এবং তাদের দলের কোনো পরিচয় নেই। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা তার সঙ্গে নেই। অব্যাহতিপ্রাপ্তরা তার সঙ্গে আছেন। এটা শুধু আওয়ামী লীগে নয়, এমন কাজের জন্য বিএনপি কি তাদের ৩০ জন নেতাকে (কাউন্সিলর পদপ্রার্থী) দল থেকে বহিষ্কারর করেনি? দলের জন্য এগুলো রুটিন ওয়ার্ক।

আপনি তো দলের মহানগর কমিটির সভাপতি, দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারায় নিজের দুর্বলতা আছে বলে মনে করেন?

সভাপতি হিসেবে দলকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ রাখার আমার যে প্রচেষ্টা তা আমি করেছি।  আপনারাই লক্ষ্য করছেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগ কী রকম ঐক্যবদ্ধ। বরং তিনি (জাহাঙ্গীর) মাঝপথে দলে এসে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলেন। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের ফলে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হয়েছে।

ভোটের পরিবেশ কেমন দেখছেন? ভোটাররা যথেষ্ট কেন্দ্রে আসবেন বলে মনে হয়?

সারা গাজীপুরে ভোটের একটা ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছে। ভোটের পরিবেশ আজ পর্যন্ত খুব ভালো আছে। আশা করছি, নির্বাচন পর্যন্ত এ পরিবেশ অব্যাহত থাকবে। আমি আশা করছি, রেকর্ড সংখ্যক ভোটার উপস্থিত থাকবে। মানুষের সাড়া দেখেই এটা বুঝা যায়।

ইভিএমে নির্বাচন নিয়ে আপনার মতামত কী? ভোটের ফল যাই হোক মেনে নেবেন কি-না?

ভোট ইভিএমে হবে নাকি ব্যালটে হবে, এটা নির্ধারিত হয় নির্বাচন কমিশনের মাধমে। নির্বাচন কমিশন ভোটটাকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি এটাকে স্বাগত জানাই। নির্বাচনে যে ফলাফলই হোক আমি ও আমার দল অবশ্যই মেনে নেব। ফলাফল আমার পক্ষে এলে ভাল হয়েছে, আর বিপক্ষে গেলে নির্বাচন খারাপ হয়েছে- এমনটা জাহাঙ্গীর সাহেবরা সব সময়ই বলেন। আদালতে যান। আদালতে যাওয়ার আগে বলেন যে, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য যাচ্ছি। এখন উনি সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন, দলের বিরুদ্ধে বলা শুরু করেছেন, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বলা শুরু করেছেন, হাই কোর্টের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছেন। এটা কিছু মানুষের মজ্জাগত স্বভাব। উনি যা চান, তা না হলেই এ ধরনের কাজ তিনি করেন।

নির্বাচিত হলে গাজীপুরবাসীর জন্য প্রথম কোন কাজটি করবেন?

নির্বাচিত হলে প্রথমেই আমি সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত এবং একটি সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করবো।