সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন: আদিলুর

মুন্সীগঞ্জে বক্তব্য দেন শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রূপরেখা ধরে সংস্কার কাজ শেষে নির্বাচিত সরকারের কাছে দ্রুতই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র।

তিনি বলেছেন, “দেশে গণহত্যা হয়েছে। এদেশের ছাত্র-জনতা সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের অবসান হয়েছে।

“সেই ফ্যাসিবাদ যেন আবার ফেরত না আসে সেজন্য সংস্কারের চেষ্টা চলছে। আমাদের সংস্কারের কাজটা করে যত দ্রুত সময়ে পারি একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা বা নির্বাচিত ব্যবস্থার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।”

শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যেন গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে ওঠে, অন্যায়-অবিচারের অবসান হয়, ব্যাপকভাবে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এর অবসান হয়। যারা এক সময় আমাদের উপর অত্যাচার করেছে তাদেরও যেন মানবাধিকার রক্ষা হয়।

“আমরা কিন্তু তাদের উপর অত্যাচার করতে পারব না। তাহলে কিন্তু আমরা আবার ভুল করে ফেলব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। চিকিৎসা হচ্ছে না। দেশ অক্ষত অবস্থায় নাই। এ অবস্থায় গড়ার যে চেষ্টাটা সেটা অনেক কঠিন। ১৬ বছর ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা। যেটা শাসক না, শাসন ব্যবস্থাটাই ছিল ফ্যাসিবাদী। সেখানে আজকে হয়েছে ১৫ দিন। আমরা চেষ্টা করছি, কাজটা কঠিন। কিন্তু অবশ্যই ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সফল হব বলে আশা করছি।”

মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বাছির উদ্দিন জুয়েলের সভাপতিত্বে ও মাহাবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, দৈনিক সভ্যতার আলো সম্পাদক মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক আহ্বায়ক মঞ্জুর মোর্শেদ, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আরিফ উল ইসলাম আরিফ, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি গুলজার হোসেন, সাব্বির আহম্মেদ দিপু, আতিকুর রহমান টিপু, তানভীর হাসান, মোজাম্মেল হোসেন সজল, আবু সাঈদ সোহান, সুজন হায়দার জনি, অ্যাডভোকেট ফারহানা মির্জা, সোনিয়া হাবিব লাবনী, ভবতোষ চৌধুরী নুপুর, সাংবাদিক শেখ মো. শিমুল, সাইফুর রহমান টিটু, ফয়সাল হোসেন, আরাফাত রায়হান সাকিব, সিহাব হোসেন।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান ও শিক্ষক তামান্না সরকার মনি ছাড়াও ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফারদিন, নোমান, তাজ, সোহাগ।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাকিব, সেতু, আজিজ।

নিহত ৩ পরিবারকে সমবেদনা

মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন আদিলুর।

শুক্রবার শহরের উত্তর ইসলামপুরের মিশুক চালক রিয়াজুল ফরাজি, অটোরিকশা চালক ডিপজল সরদার ও রং মিস্ত্রী মোহাম্মদ বাড়িতে যান তিনি।

গত ৪ অগাস্ট শহরের সুপার মার্কেটের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য চত্বরে গুলিতে ওই তিনজন নিহত হন। এই সময় আহত হন শতাধিক মানুষ। ছাত্ররা সুপার মার্কেটের সেই চত্বরের দিয়েছে ‘শহীদ চত্বর’।

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে। শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদানে একটি ফাউন্ডেশন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমেই যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”