ভিড় করা মানুষের করতালি ও হর্ষধ্বনিতে নদের দুই পাড় ছিল মুখরিত।
Published : 28 Sep 2024, 07:23 PM
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কুমার নদে শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ হয়েছে।
নতুন প্রজন্মকে মোবাইল ফোন ও মাদকমুক্ত রাখতে উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামবাসী শুক্রবার এর আয়োজন করেন।
১০০ বছর ধরে এখানে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে স্থানীয়রা জানান।
আয়োজকরা জানান, বিকাল ৪টায় কুমার নদের হোগলাকান্দি ব্রিজের পশ্চিম থেকে সুরুপী পর্যন্ত ২ কিলোমিটারজুড়ে এ বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি রাউন্ডে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা।
ঠিকারি, কাশির বাদ্যের তালে তালে জারি-সারি গান গেয়ে, বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহের সৃষ্টি হয় নদে।
দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি ও হর্ষধ্বনিতে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামাল খান বলেন, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ১২টি বাছারি নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
বাইচে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মোবাইল বাছারি প্রথম, কাশিয়ানী উপজেলার দোলাগ্রামের রেজাউলের বাছারি দ্বিতীয় ও ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার তামারহাজী গ্রামের বাকু শেখের বাছারি তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, সালথা, ভাঙ্গা উপজেলার ২০টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ কুমার নদের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে শরতের মনোরম বিকালে শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।
এ উপলক্ষ্যে কুমার নদ তীরে বসে গ্রামীণ মেলা। সেখানে স্থান পায় শতাধিক দোকানপাট।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামাল খান বলেন, “গোপালগঞ্জ বাওড়, বিল, খাল ও নদী বেষ্টিত জেলা।
এ জেলায় বর্ষা মৌসুমে শত শত বছর ধরে নৌকা বাইচের আয়োজন হয়ে আসছে।”
বাঙালির নিজস্ব কৃষ্টি, কালচার নৌকা বাইচ হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্ম বিনোদনবিমুখ হয়ে মোবাইল ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের মোবাইল ও মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখতে আমরা প্রতি বছর এ আয়োজন করে আসছি। যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।”
হোগলাকান্দি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন গালিব বলেন, “এখানে প্রত্যেক রাউন্ডে নৌকায় নৌকায় তুমুল প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেছি। এ প্রতিযোগিতা দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছি। এটি শত বছর ধরে টিকে রয়েছে। এ নৌকা বাইচ উপভোগ করতে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে কুমার নদের পাড়ে সমবেত হন। ”
বাইচের আয়োজক কমিটির সদস্য আড়পাড়া গ্রামের নজির খান ও ইদ্রিস খান বলেন, নদী, খাল, বিল ও বাওড় শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন বাইচের নৌকাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ঐতিহ্য এবং নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে এ আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতা শেষে সন্ধ্যায় কাশিয়ানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খুরশিদ আলম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।