‘খুনি রশীদ কুমিল্লার কলঙ্ক’

বঙ্গবন্ধুর এই খুনিকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2022, 08:44 AM
Updated : 15 August 2022, 08:44 AM

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ৪৭ বছর পূর্ণ হলেও এখনও অধরা রয়েছেন খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ; তাকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি তুলেছে কুমিল্লার চান্দিনাবাসী।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) রশীদের বাড়ি চান্দিনা উপজেলার কেরনখাল ইউনিয়নের ছয়ঘড়িয়া গ্রামে। এলাকার মানুষজনের ভাষ্য, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হলে কুমিল্লাবাসী দায়মুক্ত হবে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মালেক বলেন, “কর্নেল রশীদ একজন আত্মস্বীকৃত খুনি। ইতিহাসের পাতায় কুখ্যাত ও ঘৃণিত এক নাম। খুনি রশীদ গোটা কুমিল্লার জন্যই কলঙ্ক।”

“আমরা চাই, বিশ্বের যে দেশেই থাকুক না কেন, দ্রুত তাকে খুঁজে বের করা হোক এবং দেশে ফিরিয়ে এনে অনতিবিলম্বে ফাঁসি কার্যকর করা হোক। তার ফাঁসি কার্যকর হলেই চান্দিনা তথা কুমিল্লাবাসী দায়মুক্তি লাভ করবে।”

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দায়ে দুই দফায় ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও বাকি পাঁচ খুনি এখনও রয়েছে অধরা। তারা হলেন- আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী।

এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের বারবার দাবির পরও তাদের ফেরত পাঠানো হয়নি। বাকি তিনজনের কোনো খোঁজ এখন পর্যন্ত পায়নি সরকার কিংবা গোয়েন্দারা। মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন বলে গত বছর পত্রিকায় খবর এলেও তার ‘সত্যতা নিশ্চিত’ হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার।

খুনি রশীদের অবস্থান শনাক্ত করতে না পারলেও সরকার তার চান্দিনার বাড়ি ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামে খন্দকার বাড়িতে কর্নেল রশীদের একটি দোতলা বাসভবন রয়েছে। ভবনের সামনেই কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা দিয়ে বাজেয়াপ্ত ওই সম্পত্তিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চান্দিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বকসী বলেন, এ ছাড়া উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রাম, পৌর এলাকার বেলাশ্বর, মাইজখার ইউনিয়নের পানিপাড়া ও করতলা গ্রামে কর্নেল রশীদের ক্রয় করা ও পৈত্রিক সম্পত্তি মিলিয়ে সর্বমোট ছয় দশমিক ১২ একর সম্পত্তি রয়েছে।

“কয়েকটি মামলার প্রক্রিয়া শেষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিস কেইস নং-০৩/২০১৫ মূলে ওই সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওই জমিগুলোর তফসিলসহ সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাষ্ট্রের অনুকূলে দখলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন।”

উপজেলার মাধাইয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, “বর্তমান সরকার ১৩ বছরের বেশি একটানা ক্ষমতায়। কিন্তু এরপরও খুনি রশীদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ায় আমরা হতাশ।”

উপজেলার নবাবপুর এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী মফিজুর রহমান বলেন, “খুনি রশীদ আমাদের জন্য কলঙ্কের নাম। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বিচারবিভাগের শক্তিশালী ভূমিকার দৃষ্টান্ত হিসেবে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাই আমরা।

“আমরা মনে করি, বর্তমান সরকার বিষয়টি নিয়ে আরও তৎপর হওয়া দরকার। কারণ প্রতি বছরের ১৫ আগস্ট এলেই খুনি রশীদের বিষয়টি আলোচনায় আসে, পরে আবার সবাই ভুলে যায়।”

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বকসী আরও বলেন, “দেশে ফিরিয়ে আনার পর ফাঁসি কার্যকর হলে চান্দিনার মাটিতে আমরা কর্নেল রশিদের লাশ দাফন করতে দেব না। কয়েক বছর আগেই উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সকলে মিলে আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”