মুন্সীগঞ্জ হাসপাতালে লিফট দুর্ঘটনায় টেকনিশিয়ানের মৃত্যু

দুর্ঘটনার পর থেকে ভবনটির দুইটি লিফটই বন্ধ রাখা হয়েছে। তাতে দুর্ভোগে পড়েছেন মুমূর্ষু রোগী ও চিকিৎসকরা।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2024, 10:45 AM
Updated : 24 Feb 2024, 10:45 AM

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের লিফট রক্ষণাবেক্ষণ করতে এসে নীচে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক টেকনিশিয়ান।

শনিবার সকালে হাসপাতালের ৭ তলা বিশিষ্ট ভবনে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম।

নিহত ফকরে আলম শিপন (৪০) রাজধানীর ইমাম ইঞ্জিনিয়ারস কর্পোরেশনের কর্মী। প্রতিমাসে লিফট সার্ভিসিংয়ের অংশ হিসেবে তিনি পল্টন থেকে সকালে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

তার সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী আবু হাসনাত আল মাহিন জানান, সকালে তারা দু’জন হাসপাতালের লিফট সার্ভিসিংয়ে আসেন। পরে তিনি সপ্তম তলায় এবং শিপন ৬ তলার লিফটের কেবিনের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করছিলেন।

“হঠাৎ লিফট নিচের দিকে নামতে শুরু করে। শিপন কোনো বাটনে চাপ দিয়েছেন না নিচ থেকে কেউ লিফটে কল দিয়েছে তা আমি খেয়াল করিনি।

“এ সময় ডোরের পাশে কিছু ধরে শিপন ১০-১৫ সেকেন্ড ঝুলে ছিলেন। আমার সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। কিন্তু আমরা হতবিহ্বল হয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি হাতটা ছেড়ে দেন।”

“আমাদের চোখের সামনেই তিনি নিচে পড়ে যান। নিচে অন্ধকার ছিল কিছু দেখা যাচ্ছিল না। আমরা দ্রুত নিচে নেমে আসি। পাশের লিফট বন্ধ করে তাকে বের করে আনি। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের বহুতল নতুন ভবনের এই লিফট ঘিরে আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল রোগী ও স্বজনদের। প্রায় সাত মাস আগে এই লিফট ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু এরপর থেকেই অস্বাভাবিক শব্দ ও আকস্মিক লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

লিফটগুলো পরিচালনার জন্য অপারেটর থাকার কথা থাকলেও কোনো অপারেটর থাকে না অভিযোগ করে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন বলেন, তার রোগী ছয় দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি। তিনি একবারও কোনো অপারেটর দেখেননি।

তিনি আরও বলেন, লিফট চলাকালে জোরে শব্দ হত। অনেক সময় লিফট বন্ধ হয়ে যেত। কিছু সময় পর আবার চলতে শুরু করতো।

সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলমও দাবি করেন, “নতুন এই লিফটে সমস্যা হচ্ছিল। আমরা এই লিফট লাগানোর পর থেকেই কিছু সমস্যা হচ্ছিল। আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। আমরা বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি। হয়তোবা এজন্যই তারা মেরামত করতে আসে।”

তিনি বলেন, “গণপূর্ত বিভাগ এখনও লিফট হস্তান্তর না করে তাদের কাছেই রাখে। এটা যখন পরিপূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্তভাবে চলবে তখন তারা এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করবে।”

তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগ ভবনটি নির্মাণসহ লিফট স্থাপন করে। প্রায় এক বছর আগে লিফটি এখানে স্থাপন করা হয় এবং ৭-৮ মাস ধরে চলছে। গণপূর্ত বিভাগের লোকজনই এটা চালায়। লিফট অপারেটরও গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত বিভাগ লিফট মেরামতের দায়িত্ব দেয় হাসান অন্ড সন্সকে।

গণপূর্ত বিভাগের মুন্সীগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী নাহিদ হাসান জানান, “প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬০০ কেজি ধারণ ক্ষমতার দুইটি নতুন লিফট স্থাপন করা হয়। সেগুলোতে কোনো মেকানিক্যাল সমস্যা ছিল না।

“শনিবার লিফট মেরামতের বিষয়টিও আমাদের অবগত করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে কী করছে আমরা বিষয়টি জানি না।”

এদিকে শনিবার সকালের এই দুর্ঘটনার পর থেকে ৭ তলা বিশিষ্ট ভবনটির দুইটি লিফটই বন্ধ রাখা হয়েছে। তাতে হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে ওঠা-নামায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও চিকিৎসকরা।

সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল বলেন, লিফট বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গণপূর্তকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান উপসহকারী প্রকৌশলী নাহিদ।