“যারা জীবনে এই প্রথম নৌকা বাইচ দেখল; তারা খুব আনন্দ পেয়েছে।”
Published : 01 Nov 2024, 10:52 PM
নৌকা বাইচকে ঘিরে সকাল থেকে মানুষ জমায়েত হতে থাকেন নদী পাড়ে। সেখানে বসে কালীপূজার গ্রামীণ মেলা। দুপুরের মধ্যে বাইচে অংশ নিতে চলে আসেন নৌকাসহ মাঝি-মাল্লারা। আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষ।
শুক্রবার সকাল থেকে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের রাধাগঞ্জ গ্রামে।
সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কালীপূজা উপলক্ষে আয়োজন করা হয় আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ উৎসব।
রাধাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতি এ বাইচ উৎসবের আয়োজন করে। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তুমুল বাইচ।
এতে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বর্ণিল ৫০টি নৌকা অংশ নেয়।
বাহারি নৌকাগুলো দেখতেও ছিল দৃষ্টিনন্দন। দারুণ প্রাণোচ্ছল তার মাঝি-মাল্লারা।
নদীর বুকে তাদের ছুটে চলা ও বইঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে নদীর দুই পাড়ে থাকা হাজারো দর্শণার্থী।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা বাইচ বাংলার লোকসংস্কৃতি। তাই তো হেমন্তের মনোরম বিকালে নদীপাড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নামে। ঘাঘর নদীর খেজুরবাড়ি থেকে মান্দ্রা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার জুড়ে নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বাইচকে কেন্দ্র করে নদীর দুইপাড়ে বসে মেলা। মেলার স্টলগুলোতে প্রচুর কেনা-বেচা হয়েছে।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার লখন্ডা গ্রামের নিটুল রায় বলেন, “এখানে নৌকা বাইচ দেখতে এসে অনেক দিন পর উৎসবমুখর পরিবেশে কালারফুল ও প্রাণবন্ত নৌকা বাইচ উপভোগ করলাম।”
কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মনু দাড়িয়া বলেন, “আমি একটি ট্রলারে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এই নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। আমাদের সঙ্গে কয়েকটি শিশু আছে। যারা জীবনে এই প্রথম নৌকাবাইচ দেখল। এই বাইচ দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়েছে।”
গণমাধ্যমকর্মী মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, “কোটালীপাড়্ উপজেলায় এক সময় অর্ধশত স্থানে দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী ও বিশ্বকর্মা পূজায় নৌকা বাইচ হত। কালের বিবর্তনে খাল, নদী দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় ঐহিত্যবাহী এ নৌকাবাইচ হারিয়ে যেতে বসেছে। বিনোদনমুখী এই নৌকা বাইচকে ধরে রাখার জন্য আমি উপজেলার নদী ও খাল দখলমুক্ত এবং খননের দাবি জানাচ্ছি।”
নৌকা বাইচ শেষে সন্ধ্যায় রাধাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির পক্ষ থেকে অংশ নেওয়া বাছারী নৌকাগুলোর মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় সমিতির নেতারা ছিলেন।