শুক্রবার সিংগাইরের ফোর্ডনগর এলাকার ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাশ থেকে ৩৬ বছর বয়সী রুবেলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
Published : 09 Nov 2024, 02:17 PM
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের ছয় ঘণ্টার মধ্যে তার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাবের দাবি, পরকীয়া সম্পর্কের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তরুণীকে ‘অনৈতিক প্রস্তাব’ দেওয়ায় ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে।
এই হত্যার ‘মূলহোতা ও তার সহযোগী’ গৃহবধূকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার ভোরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র্যাব ৪, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আরিফ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর এলাকার ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাশ থেকে ৩৬ বছর বয়সী রুবেলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
লাশের মাথায় চারটি ও বাম কানের নিচে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের পাশাপাশি গলায় শ্বাসনালীও কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
নিহত রুবেল পার্শ্ববর্তী ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি দুই সন্তানের বাবা ছিলেন।
রুবেলের স্ত্রী আঞ্জুমানারা বলেন, বুধবার রাতে তার স্বামীকে মোবাইলে কল করে অজ্ঞাত কেউ ডেকে নেয়। তারপর রুবেল আর বাড়িতে ফেরেনি। আশেপাশে ও আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার লোকজন জানায় ফোর্ডনগরে ধলেশ্বরী নদীতে ভাসমান লাশ পাওয়া গেছে। পরে সেখানে গিয়ে স্বামীর লাশ দেখতে পান আঞ্জুমানারা।
খবর পেয়ে র্যাব-৪, সিপিসি-৩, মানিকগঞ্জ এর একটি দল দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনাস্থলে থাকা পারিপার্শ্বিক আলামত এবং তথ্য সংগ্রহ করে।
পরে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ছয় ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে এবং ফোর্ডনগর এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের ‘মূলহোতা’ মো. বিজয় (১৯) ও তার ‘সহযোগী’ গৃহবধূকে (১৮) গ্রেপ্তার করে।
বিজয় ধলেশ্বরী নদীতে খেয়া পারাপার করেন ও ফোর্ডনগর এলাকার আ. সালামের ছেলে এবং আটক তরুণী একই এলাকার এক ব্যক্তির স্ত্রী।
তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তির বরাতে র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, খেয়া পারাপারের সময় বিজয়ের সঙ্গে ওই তরুণী গৃহবধূর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বিষয়টি এলাকার লোকজন জেনে গেলে কয়েকদিন আগে বিজয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে রুবেল। পরে বিজয়ের মোবাইল হেফাজতে নিয়ে কৌশলে বিজয় ও গৃহবধূর স্পর্শকাতর ছবি ও ভিডিও নিজের মোবাইলে নিয়ে নেয় রুবেল।
এরপর রুবেল গৃহবধূকে সেসব স্পর্শকাতর ছবি-ভিডিওর কথা জানিয়ে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি না হলে ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলেও হুমকি দেয়।
বিষয়টি গৃহবধূ তার ‘প্রেমিক’ বিজয়কে জানায়। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এদিকে রুবেল মাঝে মাঝে মোবাইলে গৃহবধূকে অনৈতিক প্রস্তাবের বিষয়ে জানাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার গৃহবধূকে ফের মোবাইলে অনৈতিক প্রস্তাবের কথা বলে এবং মধ্যরাতে তার বাড়িতে আসবে বলেও জানায়।
সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বিজয়কে জানান তরুণি। এবং হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুবেলকে ফোর্ডনগর এলাকার আক্তার ডেইরী ফার্ম সংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে আসতে বলেন।
রুবেল সেখানে এসে গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে লুকিয়ে থাকা বিজয় পিছন থেকে এসে রুবেলের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে।
রুবেল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ওই নারী তার পা চেপে ধরেন এবং বিজয় কাপড় কাটার বড় কাঁচি দিয়ে রুবেলের মাথায় ও গলায় উপুর্যপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পরে রুবেলের লাশ ও আলামত নদীতে ফেলে তারা চলে যায় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে র্যাব।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব আরও জানিয়েছে, গ্রেপ্তার আসামিদের সিংগাইর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিংগাইর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, রুবেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।