তিনি ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’ বলে পুলিশের ভাষ্য।
Published : 28 Mar 2024, 01:01 PM
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে নিজের বাসায় পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন। তিনি ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’ বলে পুলিশের ভাষ্য।
উইন রোজারিও নামে ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণের বাড়ি গাজীপুরে। পরিবারের সঙ্গে ওজোনপার্কে ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ অ্যাভিনিউয়ে থাকতেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে ওই বাসায় এ ঘটনা ঘটে বলে ওইদিন সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই বাসা থেকে উইন পুলিশের হটলাইন ৯১১ নম্বরে কল করে দ্রুত সহায়তা চান। কয়েক মিনিটের মধ্যে টহল পুলিশ ওই বাসায় যায় পরিস্থিতি দেখার জন্য।
পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, পুলিশ বাসায় পৌঁছানোর পর উইন সহিংস হয়ে ওঠেন। পুলিশ চেষ্টা করছিল তাকে নিয়ন্ত্রণে এনে কাছের হাসপাতালে নিতে। কিন্তু উইন একটি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের দিকে ধেয়ে যান।
চেল বলেন, উইনকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন কর্তব্যরত দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এতে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে কাঁচি হাতে পুলিশের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। পুলিশ তখন ‘বাধ্য হয়ে’ তাকে গুলি করে।
আহত অবস্থায় উইনকে অ্যাম্বুলেন্সে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহত উইনের মা ইভা কস্টা (৪৯) দাবি করেছেন, তার ছেলে পুলিশের দিকে কাঁচি হাতে ধাওয়া করেনি। পুলিশের বডি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই তা স্পষ্ট হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, উইন ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’ বলে তাদের জানিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও (১৭)। উইনকে ঠেকাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আত্মরক্ষার প্রাথমিক অস্ত্র ‘টেজার’ প্রয়োগের চেষ্টা করলে তার মা তাদের ঠেকান।
কিন্তু পুলিশের এ দাবি ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছেন ইভা। তিনি বলেন, উইন পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায়নি, মাকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল।
ইভা বলেন, “উইন নিউ ইয়র্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। সে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল। ইন্টারভিউতে টিকে গেছে। মানসিকভাবে সে সুস্থ না থাকলে ইন্টারভিউতে টিকে কীভাবে?”
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও (৫২) ও মা ইভা কস্টা (৪৯) দুজনই জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে কাজ করেন। সপরিবারে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ২০১৪ সালে। ঘটনার সময় ফ্রান্সিস অফিসে ছিলেন।
জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জেমস রয় বলেন, “মাঝেমধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে উইন চার্চে আসত। আমি তাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। মানসিকভাবে সামান্য অসুস্থ ছিলেন। ৬ মাস আগেও সে জ্যামাইকা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে তাকে কখনো অস্থির হয়ে কোনো বাজে কাজে লিপ্ত হতে দেখিনি বা শুনিনি।”
নিউ ইয়র্ক পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, “আমাদের দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই বাসায় গিয়েছিল জরুরি সহায়তা করতে। তারা কখনোই কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগে আগ্রহী ছিলেন না। উইন যদি সাড়া দিতেন, তাহলে এমন পরিস্থিতির অবতারণা হত না।”
নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তার অস্ত্র নিয়ে নেওয়া হয়েছে।