গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি: মির্জা আব্বাস

“এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। আপনারা অনেক সহ্য করেছেন, আরও সহ্য করতে হব। যদি বলেন কতদিন সহ্য করতে হবে, এটা বলা সম্ভব না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 08:37 AM
Updated : 9 March 2024, 08:37 AM

সরকারের ‘পতন না হওয়া পর্যন্ত’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে নতুন প্রজন্মকে এ আন্দোলনের সামনে সারিতে নিয়ে আসার ওপর জোর দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

শনিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজকের কর্মসূচি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে…। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বাড়ছে, বাড়বে। আমরা এটাই জনগণকে জানাতে চাই শুধু, আর কিছুই না; আমাদের এই চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন, আমাদের এই অহিংস আন্দোলন, গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন, বাক স্বাধীনতার আন্দোলন, ভোটের অধিকারের আন্দোলন সারা বাংলাদেশে চলবে।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা বলতে চাই, গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় নাই। সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে কখনো ব্যর্থ হয় নাই। আজকে না হয় কালকে এই ফ্যাসিস্ট দখলদার সরকারের পতন ঘটবেই এই জনতার হাতে। এদের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”

ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “মুসোলিনি-স্ট্যালিনরা বহুদিন রাজত্ব করেছে। কিন্তু পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। জনগণের আন্দোলনের মুখে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার টিকে থাকতে পারে নাই।আজকে যে সরকার আছে, এটাকে সরকার বলা যাবে না; এটা হচ্ছে ভিন্ন ভাষায় বলা যেতে পারে এটা সরকার নয়। এরা জোর করে জনগণের ভোটের বাইরে ক্ষমতায় টিকে আছে। ক্ষমতায় টিকে আছে লুটপাট করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে আছে চুরি করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে আছে এ দেশের মানুষের কষ্ট দেওয়ার জন্য।”

এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলন করতে করতে এই পর্যন্ত এসেছি। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। এখন পরবর্তী যে প্রজন্ম আছে, তাদেরকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মনোবল ঠিক রাখতে হবে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে হবে।

“এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। আপনারা অনেক সহ্য করেছেন, আরও সহ্য করতে হব। যদি বলেন কতদিন সহ্য করতে হবে, এটা বলা সম্ভব না।”

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গতবছর ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ‘সরকারের পূর্ব পরিকল্পিত’ মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, “২৮ তারিখ কী হয়েছিল? সেই প্রথম থেকে একটা নকশা করে, এটা ডিজাইন করে যাতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে, যাতে বিএনপি নির্বাচনে আসতে না পারে, এই চক্রান্ত প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে। সেজন্য দুই বছর আগে থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হয়।”

২৮ অক্টোবর বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ‘বর্বরোচিত হামলা’ হয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ওই হামলায় আমি এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ (মহাসচিব) কয়েকজন শেষ পর্যন্ত মঞ্চে ছিলাম। সেই সময় আমরা দেখেছি, যখন টিকে থাকা সম্ভব ছিল না, টিয়ার শেল আমাদের ট্রাকের মাঝে পড়েছে। সামনে রাইফেল হাতে পুলিশ দাঁড়ানো, গুলি করবে। হয়ত তারা গুলি করে নাই। আমরা নেমে যেতে বাধ্য হয়েছি। এমন নারকীয় ঘটনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীও ঘটায়নি সেটা সেদিন ওরা ঘটিয়েছে।”

কারাগারে নেতা-কর্মীদের ওপরে ‘নিপীড়ন-নির্যাতনের’ অভিযোগ তুলে সম্প্রতি কারা মুক্ত নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, “এই নির্যাতন ও অত্যাচার যেভাবে সীমা ছাড়িয়ে গেছে, এটা আর সহ্য করা যায় না, বর্ণনা করা যায় না। তারপরও আমাদের নেতা-কর্মীরা এখনো তাদের মনোবল হারায়নি। তারা আশায় আছে, তারা যুদ্ধ করবে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে। এ সরকারের পতন ঘটবেই।”

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ, গ্যাসে, পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন ঢাকায় মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হয়। পরে মির্জা আব্বাস পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাদরেজ জামান, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাসির উদ্দিন নাসির বক্তব্য দেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে রফিক শিকদার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আবু তালেব, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণের ই্উনূস মৃধা, নাদিয়া পাঠান পাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন।

সকালে বেইলি রোড সড়কে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ওই সময়ে বিএনপির রফিকুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান সুমন, আকরামুল হাসান, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের জাহিদুল কবির তার সঙ্গে ছিলেন।