বিস্ফোরণ ‘ব্যর্থতায়’, পঞ্চগড়ে হামলা ‘আন্দোলন নস্যাৎ করতে’: ফখরুল

“এই যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করা, বিভেদ সৃষ্টি করা– এটা সরকার সৃষ্টি করছে। আমরা মনে করি তারা অত্যন্ত অসৎ উদ্দেশ্যে করছে,“ বলেন ফখরুল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2023, 12:13 PM
Updated : 5 March 2023, 12:13 PM

চট্টগ্রাম ও ঢাকার মিরপুর রোডের বিস্ফোরণের পেছনে সরকারের ‘ব্যর্থতা’ দেখতে পাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তার দাবি, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার পেছনে রয়েছে সরকারের ‘অসৎ উদ্দেশ্য’। এই ঘটনা ঘটিয়ে সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন ‘নস্যাৎ’ করতে চায়।

বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, জনগণ ‘সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে’। এ অবস্থায় জনগণকে বিভ্রান্ত করতে, তাদের দৃষ্টি ঘুরাতে সরকার ইচ্ছা করে ‘সাম্প্রদায়িক সংকট’ সৃষ্টি করেছে।

রোববার দুপুরে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে পর সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ আন্দোলন’ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে হয় ওই বৈঠক। এতে বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে রাজপথে থাকার ঘোষণা আসে বাম ঐক্যের পক্ষ থেকে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গতকাল সীতাকুণ্ডে এবং আজকে ঢাকায় বিস্ফোরণ হয়েছে…। আমাদের প্রশ্ন এই বিস্ফোরণগুলো ঘটছে কেন?”

পরে নিজেই জবাব দিয়ে তিনি বলেন, “সরকার যখন ব্যর্থ হয় তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে, যারা এ বিষয়গুলোর দায়িত্বে রয়েছে… সব কিছু সঠিকভাবে আছে কি না… অর্থাৎ সেখানে যেন বিস্ফোরণ না ঘটে, কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, দুর্ঘটনা ঘটলে যেন মানুষের জীবন নাশ না হয়, সেই ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না।

“সরকারি সংস্থাগুলো সেই ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকারের ব্যর্থতার কারণে এই ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।”

শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সোনাইছড়ি ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেসরকারি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশেপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে এবং প্ল্যান্টের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ছয় জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হন।

ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে রোববার ঢাকার মিরপুর রোডে সুকন্যা টাওয়ারের কাছে একটি তিনতলা ভবনে বিস্ফোরণে তিন জনের প্রাণহানি হয়।

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা সরকারের কারণে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “শুধুমাত্র জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য, অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য এই ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাৎ করতে চায়।”

পঞ্চগড়ে রোববার তিন দিনব্যাপী ‘সালানা জলসা’র আয়োজন করে আহমদিয়া সম্প্রদায়। অন্যদিকে এই জলসা বন্ধ ও তাদেরকে ‘অমুসলিম’ ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে পঞ্চগড় শহরে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কিছু ধর্মভিত্তিক সংগঠন।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরে বড় মিছিল হয়। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ট্রাফিক পুলিশের স্টেশন, পঞ্চগড় বাজার মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর এবং বিকালে আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ সময় শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।

ফখরুল বলেন, “আমাদের প্রশ্ন যে, এই ধরনের একটা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সরকার চুপ করে থাকল কেন? যখন আক্রমণ হয়েছে, তখন পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা দেখল কেন? সেটাকে তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হল না কেন?

“এই যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করা, বিভেদ সৃষ্টি করা –এটা সরকার সৃষ্টি করছে। আমরা মনে করি তারা অত্যন্ত অসৎ উদ্দেশ্যে করছে।”

বিএনপি নেতা বলেন, “দেশের মানুষ যখন গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছে, অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে, দ্রব্যমূল্য যখন জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, মানুষ যখন এই নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে, মিছিল করছে, রাজনৈতিক দলগুলো যখন রাস্তায় নেমে এসেছে, তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে ডাইভারশন করানো জন্য, শুধুমাত্র জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য, অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য।

“এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আমরা করছি সরকারকে। তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে এবং যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

‘আদানির চুক্তির বিষয়টি ঘুরাতে পঞ্চগড় ইস্যু’

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক হারুন আল রশীদ খান বলেন, “আদানি গ্রুপের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়টাকে ঘুরানোর জন্য পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি ইস্যু তৈরি করা হয়েছে। এটা মানুষ এখন বলাবলি করছে।

“আপনারা দেখেছেন, কয়েকদিন আগে প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল সরকার কীভাবে বিতর্কিত করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনে এক অরাজগক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।”

বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে অবস্থান করে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।”

বৈঠকে বিএনপির পক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও উপস্থিত ছিলেন।

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের পক্ষে হারুন ছাড়াও ছিলেন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, একই দলের নুরে আলম ও শাহজালাল মোল্লা।