প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ক্ষমতাও পাচ্ছে দলগুলো

সংসদ নির্বাচনে এক আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়ার সঙ্গে প্রত্যাহারের ক্ষমতাও পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2013, 02:03 AM
Updated : 10 July 2013, 02:44 AM

নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব মেনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন হলে কোনো দলের প্রাথমিক মনোনয়নের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত ব্যক্তি নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।

নবম সংসদ নির্বাচনে এনিয়ে সমস্যায় পড়ায় তা কাটিয়ে তুলতে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে ইসি।

আইন মন্ত্রণালয় তা পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ। তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠানো হবে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, তৃণমূলের মতামত নিয়ে দলীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড সংসদের এক আসনে একটি দলের সর্বোচ্চ ৩-৫ প্রার্থীর নাম মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখান থেকে বাছাইয়ের পর দলের পক্ষ থেকে মনোনীত একজনকে প্রতীক বরাদ্দ দেয় রিটার্নিং কর্মকর্তা।

কিন্তু অন্যরা মনোনয়নপত্র নিজ থেকে প্রত্যাহার না করলে ইসির করার কিছুই নেই বিদ্যমান আইনে। নবম সংসদ নির্বাচনে এ নিয়ে ঝামেলায়ও পড়েছিল ইসি।

কারণ ২০০৮ সালে পরিবর্তিত আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত নথি দাখিল করতে হয়। আর দলের মনোনয়ন না পাওয়াদের তখন ওই সুযোগও থাকে না।

নির্বাচন কমিশনার হাফিজ বলেন, “বাস্তবতা পর্যালোচনা করে এবার আমরা প্রস্তাব করছি, দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক মনোনীত একজনের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা গ্রহণের পর অন্যদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে।”

ইসি

তার মতে, যেহেতু দলই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, তাই কে শেষ পর্যন্ত থাকবে, সেই ক্ষমতা দলের ওপরই থাকা উচিত।

‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ঠেকাতে গত ৫ ডিসেম্বর ইসির সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাব দেয়। দলের প্রতিনিধি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তখন বলেছিলেন, দলের কোনো কর্মী যখন মনোনয়ন অগ্রাহ্য বা অমান্য করে, তখন দলের শৃঙ্খলাই শুধু নয়, গণতন্ত্রের ভিতও নড়ে যায়।

তবে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আওয়ামী লীগের প্রস্তাব কমিশন রাখেনি। বরং আইনী দুর্বলতার কোনো সুযোগ না রাখতেই সংশোধনী প্রস্তাব করেছে ইসি। দল থেকে বহিস্কার বা নির্বাচন থেকে দুই মেয়াদে দুরে রাখার আওয়ামী লীগের প্রস্তাবটি তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রেই রাখতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট একক প্রার্থী দিয়েছিলেন।কিন্তু অনেক আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় প্রধান দুই দলকে বিভিন্ন কারণে ‘ঝামেলায়’ পড়তে হয়েছে।

২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে মহাজোটের আওয়ামী লীগ ২৬৪ আসনে, জাতীয় পার্টি ৪৯ আসনে, জাসদ ৭ আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫ আসনে এবং চারদলীয় জোটের বিএনপি ২৬০ আসনে, জামায়াতে ইসলামী ৩৯ আসনে, বিজেপি দুই আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন ১৫১ জন। দলের মনোনয়ন না পেয়ে এদের অনেকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, মতবিরোধে তেমনি মহাজোট ও চারদলীয় জোট বেশ কিছু আসনে একক প্রার্থী দিতে পারেনি।

ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বর্তমান ইসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “সংসদ নির্বাচনে যেহেতু মনোনয়ন দেয় দল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ক্ষমতাও দলের হাতে থাকাই ভালো।”