পেনশনের নামে ‘লুটের কায়দা’ করছে সরকার: ফখরুল

সার্বজনীন পেনশনের নামে সরকার আরেকটা ‘লুটের কায়দা’ করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2022, 03:04 PM
Updated : 26 Feb 2022, 03:04 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটা লুটেরার দলের পরিণত হয়েছে। এই লুটপাট করে, সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

“কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, এখন নাকি গণ-পেনশন দেবে, মানুষকে পেনশন দেবে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি, এটা আরেকটা লুটের কায়দা-কানুন তারা করতে যাচ্ছে।

“মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার করে টাকা নেবে। ৬০ বছর পরে নেবে, এরপর মধ্যে মারা গেলে আর ফেরত পাবে না। পরিস্কার করে কিছু বলছে না। যদিও এটা পাস হয়নি, কিন্তু এই প্রস্তাব তারা নিয়ে এসেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন, শুধু মাত্র কি করে লুট করা যায়, কি করে মানুষের পকেট কাটা যায় সেই ব্যবস্থা তারা করেছে। মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান তারা করতে পারছে না।”

“এই সরকারের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে লুটপাট করছে না। তারা মানুষকে বিপদে ফেলছে। আজকে সমস্ত বাংলাদেশে একটাই সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে-আওয়ামী লীগ।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’ এবং ‘উপজেলা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি’র দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১১ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চের ওপর এই সমাবেশে প্রেস ক্লাবের চারপাশ, তোপখানা রোড, সেগুন বাগিচা, ঈদগাহ সড়ক দিয়ে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে যোগ দেন।

‘দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা দেখছি এখন প্রতিদিন এই যে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রাকে করে, সেখানে প্রতিদিন লাইন লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে। সেই লাইনে মধ্যবিত্তরাও যাচ্ছেন কারণ তাদেরও প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“আজকে গ্যাসের দাম প্রতিবছরে ২/৩ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে প্রতি বছর ২/৩/৪ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে পানির দাম বার বার করে বাড়ানো হচ্ছে। এর কারণ একটাই- এই সরকার তার নিজের এবং সমস্ত প্রশাসন যন্ত্রকে দুর্নীতির একটা স্বর্গরাজ্য বানিয়ে দিয়েছে।”

ওয়াসার এমডির দুর্নীতি পানির দাম বাড়ার ‘প্রধান কারণ’ দাবি করে তিনি বলেন, “ওয়াসার যে এমডি আছেন তাকে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার বেতন কত জানেন? কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা।

“এই যে অপচয়, এই যে একজন বিশেষ লোককে দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া সেই কাজটা করছে সরকার। আজকে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি একটা সর্বগ্রাসী ব্যাথিতে পরিণত হয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “চালের দাম বাড়ছে কেন? উৎপাদনের তো ঘাটতি আছে। প্রতিবছর সরকারকে ৫৭ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলেছে তারা, সর্বক্ষণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন।”

বিদ্যুতের দাম কেন বাড়াতে হচ্ছে এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “যে চুরিগুলো তারা করেছে, কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট অথবা বিদ্যুতের দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করতে যা ব্যয় করছে, তা এত বেশি পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে সেখানে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকছে না।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভুর্তকি দেওয়া আর যাবে না। আমি বলতে চাই, দরকার হবে না তো। চুরি বন্ধ করেন, লুট বন্ধ করেন, ভুর্তকি দিতে হবে না।”

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আন্দোলনের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণের কাছে আবেদন জানাতে চাই যে, আসুন আজকে আপনার শরিক হউন। তরুন যুবকদের আহ্বান জানাতে চাই, জেগে উঠুন দেশ মাতৃকার ডাকে।

“সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন একসাথে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করি। বিজয় আমাদের অবশ্যই হবে ইনশাল্লাহ।”

‘জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ’

মির্জা ফখরুল বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের একটি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে স্যাংশন দিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটাকে দূর করার জন্য তারা (সরকার) লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে।

“মাসে ২০ হাজার ডলার দিতে হবে তাদের। এতদিন তো লম্বা লেকচার মারলেন, অনেক কথা বললেন। এখন কেন এই লবিস্ট নিয়োগ করছেন।”

“কারণ একটাই যে, জনগণের টাকা, ট্যাক্সের টাকা তা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জনগণের ওপর নির্যাতন করা, গুম করা, খুন করা তাকে হালাল করছেন, তাকে আড়াল করতে চাইছেন।”

এখন চর্তুদিকে ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আর  উপায় নাই। যতই ওলট-পালট করেন, যতই লবিস্ট নিয়োগ করেন আর যতই পাল্টা ডিগবাজি দিতে থাকেন, সুন্দর কথা বলেন লাভ নেই।”

সমাবেশে মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনুসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই সরকারের অপশাসন, এই সরকারের দুর্নীতি, এই সরকারের অত্যাচার, এই সরকারের সিন্ডিকেট আজকে বাংলাদেশের আজকে জনগণের নাভিশ্বাসে কারণ হয়েছে।

“আজকে ট্রাকের থেকে খাদ্য ক্রয়ের জন্য হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে, মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে গেছে, দারিদ্র্যের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“আর অন্য দিকে এই সরকারের দুর্নীতির মাত্রা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকে ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরীব আরও গরীব হয়েছে। এটা আমাদের কথা নয়, আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়। হঠাৎ করে লাফিয়ে লাফিয়ে তেলের দাম বাড়ছে, চালের দাম বাড়ছে। কী বাড়ছে না? ধনী থেকে দরিদ্র পর্যন্ত কেউ এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সকলেই ভুক্তভোগী।”

মহানগর বিএনপির দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের আমিনুল হক ও দক্ষিনের ইউনুস মৃধার সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শ্যামা ওবায়েদ, নাসির উদ্দিন অসীম, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, আবুদস সালাম আজাদ, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, জাসাসের হেলাল খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজমুদার, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।