‘পালানো ছাড়া’ সরকারের বিকল্প নেই: গয়েশ্বর

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘নীরবে-নিভৃতে পালানো ছাড়া’ বর্তমান সরকারের সামনে অন্য কোনো পথ তিনি দেখছেন না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 11:31 AM
Updated : 24 Jan 2022, 11:31 AM

সোমবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজনে তার এমন মন্তব্য আসে।

গয়েশ্বর বলেন, “আমাদের ভয়ভীতি পাওয়ার কোনো কারণ নাই। চোর সবসময় ভীত থাকে। সুতরাং চোরকে চোর বললে কিন্তু রুখে দাঁড়ায় না, দৌড়ে পালায়। গোটা সংসদকে সবাই চোর বলে। সেই চোরদের সাহস থাকার কথা না, সেই চোরদের আমরা যদি উচ্চ স্বরে শুধু ‘চোর চোর’ বলি তারপর সেই চোর কেটে পড়বে।

“অতএব আমরা শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর সুযোগ নাও পেতে পারি। শেখ হাসিনা নিজে নিজে কেটে পড়তে পারেন। অর্থাৎ বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতি ও দেশীয় রাজনীতিতে তিনি যে অবস্থানে আছেন, তাতে গুছিয়ে উঠার সুযোগ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সেই কারণে নীরবে-নিভৃতে তার পালানো ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই।”

এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সাহস করে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন না, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবেন না। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার উদ্যোগ তিনি নিতেন তাহলে হয়তোবা ধীর-স্থিরভাবে বাংলাদেশে বসবাস করে মানুষের মাঝে থাকার একটা প্রচেষ্টা নিতে পারতেন।

“কিন্তু সেটা নেবে না। আর সেটা নেবে না বলে তাকে দৃশ্যের আড়ালে থাকতে হবে, মানুষের চোখের আড়ালে থাকতে হবে। তাকে স্বেচ্ছায় বনবাসে যেতে হবে। এই বনবাসে কেউ তাকে পাঠাবে না। সেই কারণে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নাই। সূর্য ডোবার পালা। আর যারা অন্ধকারে আছেন, তাদের জন্য সূর্য উদয়ের পালা। সেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করি।”

ক্ষমতার ‘পালাবদল হবেই’- এমন আত্মবিশ্বাসের কথা শুনিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “শেখ হাসিনাকে আমরা বিতাড়িত করব– এটা তো আমাদের পণ। কেনো করব? দেশের স্বার্থে। কেন করব? জনগণের স্বার্থে। আমার মনে হয়, যে গণতন্ত্র আমরা হারিয়েছি, সেই গণতন্ত্র আবার ফেরত পাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এই সম্ভাবনাগুলো দেখেই সরকার আতঙ্কিত।

“যা কিছু করছে, জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত অথবা জনগণের দ্বারা সমর্থিত নয় এই সরকার। ফ্যাসিবাদী অপকৌশলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে যারা থাকে, তারা এই কাজগুলো করবে, এটাই স্বাভাবিক। এটাকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যবস্থাটা আমাদেরকে ফেরত আনতে হবে। জনগণের পথে যারা হাঁটে বা গণতন্ত্রের যারা দায়িত্ব পালন করে, তারা কখনো বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের মতো আচরণ করতে পারে না। সেজন্যই আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।”

এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান রেখে গয়েশ্বর বলেন, “আমাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে দৃশ্যমান হয়ে সাহসী ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে আপসহীন নেত্রীর আপসহীন কর্মীকে যদি আমরা জনগণের মনে দাগ কাটতে পারি, তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সার্থক, জিয়াউর রহমান সার্থক। সেই সার্থকতাকে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়।

২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়াতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৪৫ বছর বয়সী কোকো। পরে ২৮ জানুয়ারি তার মরদেহ দেশে আনার পর বনানীতে দাফন করা হয়।

দোয়ার আগে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হকের সঞ্চালনায় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

দোয়া মাহফিলে অংশ নেন বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, রাজীব আহসান, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, এস এম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ কয়েকশ নেতা-কর্মী।

এর আগে আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে আরাফাত রহমান কোকোর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।