সংলাপের নামে ‘তামাশা’ হচ্ছে: রিজভী

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সংলাপের নামে ‘তামাশা’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2022, 11:36 AM
Updated : 10 Jan 2022, 12:14 PM

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এ অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, “আজকে জনগণের চোখকে ধুলা দেওয়ার জন্য, জনগণের চোখকে অন্য দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য কত তিনি তামাশা করছেন। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে তিনি আবার সংলাপ দেখাচ্ছেন। আরে কিসের সংলাপ? আমরা আগে দেখতাম ট্রেনে-বাসে বড়ি বিক্রি করতে হকার অত্যন্ত মজার মজার চমকপ্রদ অনেক কাহিনী বলত, গল্প বলত, মানুষ আকর্ষণ করত। তারপরে সে বড়িটা বিক্রি করত।”

এখন সংলাপের নামে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে ‘হকারগিরি’ করানো হচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “আল্টিমেটলি যে নির্বাচন কমিশন বানানো হবে- সেখানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটবে। তার আগে একটা তামাশা করে যাচ্ছেন, তার আগে একটা হকারের সেই চমকপ্রদ কাহিনী তিনি করছেন।”

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের ভাষায়, এই সরকারের প্রত্যেকটি কাজের পেছনে ‘ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার’ চেষ্টা থাকে।

“চিরদিন টিকে থাকার জন্য যা কিছু করা দরকার, তিনি সেটা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা হয় না।”

রিজভী বলেন, “আস্তে আস্তে বাংলাদেশের মানুষ তো জানে, এখন পৃথিবীর মানুষের কাছেও এই সরকারের বোরকা খুলতে শুরু করেছে। আমি বলব প্রধানমন্ত্রীকে, আপনার সরকারের সম্পূর্ণ বোরকা খোলার আগে পদত্যাগ করুন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাকে চিকিৎসার সুযোগ দিন, রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন।”

“তা না হলে সবকিছু উন্মোচন হয়ে যাবে। উন্মোচন তো হচ্ছেই, যখন সম্পূর্ণ উন্মোচন হবে আর পালিয়েও নিজের মুখ ঢাকতে পারবেন না।”

বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সরকার ‘বিদেশে অর্থ পাচার করছে’ বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

বিএনপিপন্থি সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের যৌথ উদ্যোগে এ মানবন্ধন হয়।

২০২০ সালের ২১ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে আমরা একটি বছর রাজপথে আন্দোলন করছি। তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে ভরা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর এই সরকারের আক্রোশ খুব স্বাভাবিক। কারণ যারা ভোটে নির্বাচিত হয় না, যারা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা একদলীয় শাসন কায়েম করতে পারে; তাদের জন্য এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কাদের গনি বলেন, “আমরা মনে হয়, বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে সাংবাদিকরা এমন দুঃসময় অতীতে অতিক্রম করেনি। এতো বেশি রাজপথে সাংবাদিকদের আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়নি।

“এমন কোনো সম্পাদক পাবেন না, এমন কোনো ক্রিয়াশীল সাংবাদিক পাবেন না, এমন কোনো সাংবাদিক নেতা-কর্মী পাবেন না যার বিরুদ্ধে এই সরকারের আমলা মামলা নেই। এমনকি সরকারের দালাল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত মামলা দিয়ে তাদের আরো কোণঠাসা করে রেখেছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার।”

গত ১৩ বছরে অর্ধশত সাংবাদিককে ‘হত্যা করা হয়েছে’- এমন তথ্য তুলে ধরে কাদের গনি বলেন, “সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে সকল মতের সাংবাদিক নেতারা এককাতারে আন্দোলন করেছিল, সেই সাগর-রুনির হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ৮৪ বার পিছিয়েছে। দুনিয়ার ইতিহাসে এই ধরনের নজির আছে কি না আমরা জানি না।”

সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার দেখেছি- গণমাধ্যম আইন অবিলম্বে পাস করতে হবে। আমাদের কিছু সাংবাদিক বন্ধু এখানে ব্যানার লাগিয়েছেন। কোন আইন সেটা? সেই আইনের মধ্যে আমি দেখলাম আমাদের সামনে যে ফটো সাংবাদিক বন্ধুরা আছেন, ক্যামেরাপারসনরা আছেন, তাদেরকে সেখানে সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় নাই। তাদেরকে বলা হয়েছে কলাকুশলী।

“সাংবাদিক হিসেবে কাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে? সেখানে সাংবাদিক হিসেবে মালিকদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা মালিকদের তল্পিবাহক, তারা নিপীড়ক, প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে যারা সাংবাদিকদের বঞ্চিত করে তাদেরকে সাংবাদিকের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা কোনোভাবে সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না।

আবদুল্লাহ বলেন, “আজকের এই সমাবেশ থেকে আমি এই আইন প্রত্যাখান করছি, এই আইন সংশোধন করতে হবে, সাংবাদিক সুরক্ষার নামে এসব ভাওতাবাজি চলবে না।”

রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন আরো কঠোর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএফইউজের এ নেতা।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, মোদাবের হোসেন, খায়রুল বাশার, শাহিন হাসনাত, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, পেশাজীবী নেতা ডা. মাজহারুল আলম, রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন বক্তৃতা করেন।