আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ‘সঠিক নয়’: ফখরুল

শর্তসাপেক্ষে দণ্ড স্থগিত থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ‘সুযোগ নেই’ বলে যে মন্তব্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক করেছেন, তা ‘সঠিক নয়’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2021, 12:47 PM
Updated : 18 Nov 2021, 12:47 PM

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ল মিনিস্টার সাহেব পার্লামেন্টে যে বক্তব্যটা দিয়েছেন যে, ‘আইন নেই’, এটা সঠিক নয়। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারার বিধান মতে সরকার শর্তহীন বা শর্তযুক্তভাবে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত কিংবা মওকুফ করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সরকার শর্তযুক্তভাবে দণ্ড স্থগিত করেছেন, মওকুফ নয়।

“আইনে বলা হচ্ছে যে, সরকার প্রয়োজনে এবং যদি মনে করে, যে কোনো সময়ে পরিবর্তন, সংযোজন এবং এটার অন্য কোনো না কোনো শর্ত আরোপ করতে পারে। অর্থাৎ এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার।”

ফখরুলের ভাষায়, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখন সরকারের ওপরই নির্ভর করছে, আইনের ওপর নয়।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাকে ঢাকায় তার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি।

তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু আইনমন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা। তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে না- এটা অমানবিক।

“আমরা অবিলম্বে তার জীবন রক্ষার জন্য তাকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, করোনা পরবর্তী জটিলতায় তিনি ৫৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ৫ ব্যাগ রক্ত নিয়েছিলেন।… উনার এই বয়সে এরকম অবস্থা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

“আল্লাহর অশেষ রহমতে উনাকে সেই অবস্থা থেকে উন্নীত করে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। নতুন উপসর্গ নিয়ে তিনি আবার ভর্তি হন এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং সেখানে তার একটা বায়োপসি করা হয়।”

এরপর বাসায় চিকিৎসা চলাকালে ১৩ নভেম্বর খালেদাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “দ্রুত ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে রক্তদানের পাশাপাশি অ্যান্ডোস্কোপি করা হয়। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েও এটা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মেডিকেল বোর্ডই খালেদা জিয়াকে ‘বিদেশে নিয়ে’ উন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

“এই কথা স্পষ্টভাবে তারা আমাদের বলেছেন যে, ম্যাডাম এমন একটা অবস্থার মধ্যে আছেন, যেটা সমাধানযোগ্য। কিন্তু সময়োপযোগী সঠিক চিকিৎসা না পেলে উনি যে কোনো মুহূর্তে এমন এক অবস্থায় যেতে পারেন, যখন কোনো চিকিৎসাই কার্যকর হওয়ার সুযোগ থাকবে না।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমা্ন হাবিব, আবদুস সালাম কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, আমিনুল হক, রিয়াজউদ্দিন খান নসু, শায়রুল কবির খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।