ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটি ‘ধোঁকাবাজি’: ফখরুল

‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা জনগণের সঙ্গে ‘ধোঁকাবাজি’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2021, 01:47 PM
Updated : 5 Oct 2021, 01:52 PM

ইসি নিয়োগে আইন না হওয়ার মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে আসছেন।

কে এম নূরুল হুদা কমিমনের মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় আগের মতো এবারও একই পদ্ধতিতে নিয়োগ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানানোর পরদিন মঙ্গলবার এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব।

এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি, আর তাতে বিএনপিও অংশ নিয়েছিল।

ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “যে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, সেই অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এক নম্বর: একেবারেই তাদের (সরকার) নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে, প্রাধান্য দিয়ে গঠন করা হয়। দুই নম্বর হচ্ছে, এটা জনগণকে ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয়। (তারা বলবে) সার্চ কমিটি করেছে, আমরা তো করি নাই, আমরা তো দিই নাই।

“কিন্তু পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে, তারও আগের অভিজ্ঞতা থেকে, এটা সম্পূর্ণভাবে সরকার তার নিজের পছন্দমতো লোকজনকে দিয়ে তৈরি করে এবং সেটাকে নির্বাচনে কাজে লাগায়।”

গতবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গতবার দেখলাম, ২০১৮ সালের নির্বাচনে হুদা (কে এম নুরুল হুদা) সাহেবের যে কমিশন, সেই কমিশন পুরোভাবে সরকারের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে তাদের সেই দলীয় ভূমিকা পালন করেছে, যেটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য না।”

সংবিধান সংশোধনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হলেও আগের দাবিই তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব, যা না হওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল দলটি।

ফখরুল বলেন, “যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তাহলে সেই নির্বাচনটা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হয় না। এটা আমার কথা নয়, আগে নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত (এম সাখাওয়াত হোসেন) সাহেবরা যে নির্বাচন কমিশনে ছিলেন, তারা খুব সুস্পষ্ট করে বলেছেন, একটা সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকাটা সবচেয়ে জরুরি।

“সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, আসলে ওটাই হচ্ছে প্রথম সঙ্কট। নির্বাচন কমিশন খুব ভালো করলেন, একেবারে সমস্ত … কিন্তু তারা কাজ করতে পারল না, তখন তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।”

তাই নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি জানান ফখরুল।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই- ক্ষমতাসীনদের এ বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, “জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে আপনাকে। তারাও তো পরিবর্তন করেছে।

“তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিল এবং ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। সেজন্য কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন।”

‘নির্বাচনে আমাদের নেতা খালেদা জিয়া’

বিএনপি কার নেতৃত্বে নির্বাচন করবে কিংবা বিজয়ী হলে সরকার গঠন করবে- আওয়ামী লীগের এই প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে।

“আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দলের চেয়ারপারসন।”

খালেদা জিয়া দণ্ড নিয়ে কারাগারে থাকায় এবং তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দণ্ড নিয়ে বিদেশে থাকায় এই প্রশ্ন করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

দণ্ডিত খালেদার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকার বিষয়টি সাংবাদিকরা জানালে ফখরুল বলেন, “উনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে নেতা থাকতে পারবেন না, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ছিল, তিনি কারাগারে ছিলেন, তিনি কি নেতা ছিলেন না?”

‘ওদের থেকে বাঁচতে বিএনপিকে ভোট দেবে’

দণ্ডিতদের নেতৃত্বে রাখা বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে- প্রধানমন্ত্রী এ প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, “উনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।

“উনারা দেশের যে অবস্থা করেছেন, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়, ত্রাস আর সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নেই। এর ফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। মানুষ আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি চায়, এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়।”

“ওই কারণে বিএনপিকে ভোট দে্বে যে, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলে আজকে ৭০ টাকা কেজি চাল। বিনা পয়সায় সার দেবে কৃষকদের বলেছিল, সেখানে সারের দাম আকাশচুম্বি। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে চায় এবং যাকে খুশি তাকে দিতে চায়, সেজন্য বিএনপিকে ভোট দেবে। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে,” বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “সরকার বলছে, অনেক উন্নয়ন করেছে। যদি এত উন্নয়ন করে থাকে তাহলে তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিক না কেন? এত কথা বলেন, এত দাম্ভিকতা দেখান, ভাই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করেন, দেখেন।”

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল দাবি করেন, “বিএনপি একমাত্র দল যারা জনগণকে কিছুটা শান্তি দিয়েছিল। সেজন্য জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।”

‘অতীতের মতো নির্বাচন জনগণ মানবে না’

সরকারকে হুঁশিয়ার করে ফখরুল বলেন, “অতীতের মতো নির্বাচন কোনোমতেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না এবং ২০১৪ অথবা ২০১৮ সালের নির্বাচন নির্বাচন খেলায় জনগণ আর গ্রহণ করবে না।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল না বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “অবশ্যই ছিল। ওই সময়ে সরকার ছিল একটা অবৈধ সরকার। হাই কোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে তাদেরকে দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিল।

“আমরা তখনও বলেছিলাম যে, এটা গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশনেত্রী মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা মনে করার কোনো কারণ নাই যে, ওই সময়ে ফেয়ার নির্বাচন হয়েছিল।”

এবার দাবি না মানলে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আন্দোলন হবেই। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হবে, এদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আগে আন্দোলন করেছে, এবারো করবে।

“আমাদের দাবি একটাই, আমরা কিচ্ছু চাই না। আমরা শুধু নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।”

‘১৯৭২-৭৫ সালের কত হত্যা হয়েছিল?’

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরের ঘটনা ক্যু-পাল্টা ক্যুতে বিভিন্নজনকে ফাঁসি দেওয়ায় জিয়াউর রহমানের বিচার হওয়া উচিৎ বলে প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতিক্রিয়াও বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে সিরাজ শিকদার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার নেতা-কর্মী, তাদের আত্মীয়-স্বজনরা আহাজারি করছেন।

“আর জিয়াউর রহমানের সময়ের বিষয়ে যে কথা উনারা বলছেন যে, সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান। সামরিক আইনে মার্শাল কোর্টে তাদের বিচার হয়েছিল। অভিযোগগুলো ছিল ৭ নভেম্বরের সময়ে এবং পরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করার অভিযোগ। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা সেগুলো। কোর্ট মার্শাল করে তার বিচার হয়েছে। এখানে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল না, থাকতেই পারে না।”