বিএনপির জনসমর্থনে সরকারের ‘হৃৎকম্প’ শুরু হয়েছে: ফখরুল

বিএনপির প্রতি ‘জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারের ‘হৃৎকম্প’ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2021, 12:10 PM
Updated : 29 Sept 2021, 12:10 PM

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, “এখনও ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশি আক্রমণ চলছে, হয়রানি হচ্ছে, তল্লাশি চলছে। কেন? কারণ কী? কারণ বিএনপি জেগে উঠছে।

“আজকে এই যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের তত্ত্বাবধায়নে নতুন করে বিএনপিকে সাজানো হচ্ছে, কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে করে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।”

বিএনপির ‘জেগে ওঠায়’ সরকার ‘ভয় পেয়েছে’ দাবি করে ফখরুল বলেন, “সেই জন্যই আজকে তাদের (সরকার) হৃৎকম্প উপস্থিত হয়েছে। তারা ভয় পেয়েছে, কাঁপছে। এজন্য তারা বিএনপির ওপর চড়াও হয়ে আক্রমণ করছে।

“স্পষ্ট করে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার, কোনো একনায়ক, কোনো ফ্যাসিবাদী শাসক বা কোনো অত্যাচারী শাসক কোনোদিনই টিকে থাকতে পারে নাই। জনতার উত্তাল রোষের মধ্যে তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।”

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এখনও সময় আছে, আপনারা দেয়ালের লিখনগুলো পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা দেখুন, মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেন। এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করেন আপনাদের ব্যর্থতার জন্য।

“আপনারা যে অপরাধ করেছেন, সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, জনগণের ভোটের অধিকারকে বন্ধ করে দিয়ে, আগের রাত্রে ভোট নিয়ে চুরি করে আপনারা যে অপরাধ করেছেন, সেখান থেকে যদি রক্ষা পেতে চান অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।”

আগামীতে একটি ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণকে ‘পছন্দমত’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “কথা একটাই, এখন সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার। এখন সময় এসেছে এই সরকারকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়ার যে, তোমাকে আমরা চাই না।”

আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতা কে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নেতার কথা বলে ওবায়দুল কাদের সাহেব। আরে নেতা তো একজন আমাদের বাংলাদেশে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

“তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি এই দেশে দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরাচারকে পরাজিত করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে, লড়াই করতে গিয়ে গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন।”

‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা হয়েছে’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “করোনার টেস্ট, করোনার টিকা সংগ্রহ, বিতরণ, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কীরকম তেলেসমাতি কাণ্ড তারা ঘটিয়েছে এটা আপনারা নিজেরাই সব দেখেছেন।

“একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আছেন যার প্রতিটি কথায় মিথ্যা ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কথাবর্তা। আজকে তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শুধু করোনা নয়, তারা আজকে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে।”

কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে কিংবা জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হলে ‘চিকিৎসা পাওয়া যাবে না’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, বাংলাদেশে সমস্ত ক্ষেত্রে একটা চরম অরাজকতা, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কারণ যারা দেশ চালাচ্ছে এখন, তারা দেশ চালানোর জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। ফলে কোনো জবাবদিহিতা নেই।”

ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষজনের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ জন্য সরকারের ‘ব্যর্থতাকে’ দায়ী করেন তিনি।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে কোভিড ও ডেঙ্গু হেলপ সেন্টার কার্য্ক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিএনপি মহাসচিব এই কার্য্ক্রম উদ্বোধন করেন।

‘একদলীয় শাসন’

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এখানে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সুচতুরভাবে প্রথমে সংবিধানকে তারা কেটে-কুঁটে এক রকমের তাদের মতো করে নিয়েছে।

“পরে সমস্ত বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সকলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে দলীয়করণ করেছে। আজকে আমাদের যে গণমাধ্যম আছে, সংবাদ মাধ্যম আছে তাদেরকেও তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।”

ফখরুল বলেন, “আমরা আজকে সমগ্র দেশে যেটা দেখতে পাচ্ছি, আবার সেই পুরনো স্লোগান তারা নিয়ে এসেছে- এক নেতা এক দেশ…।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “বিএনপি শাসনামলে একটা স্লোগান উঠেছিল ‘এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। দাবি তুলেছিল জামায়াতে ইসলাম, সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

“জামায়াত-আওয়ামী লীগ মিলে দাবি তুলল, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেনে নিলেন। আজকে আমরা দাবি করছি, এই মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”

সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে যে ‘সার্চ কমিটি’ করবে, তাতে আগেই ‘অনাস্থা’ জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “এই দেশের গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এই সরকারকে রেখে কোনো নির্বাচন করা যাবে না।

“সুতরাং জনগণের দাবি মেনে নিয়ে দয়া করে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, নিজেদেরকে ভালো রাখুন। নইলে দেশে যে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেই পরিস্থিতির জন্য আপনাদের ওপর দায়-দায়িত্ব্ বর্তাবে।”

বিএনপি মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, “মহানগর পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশ্যে আমি বলব, আমাদের উন্মুক্ত জায়গায় সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন করার অনুমতি দিন।

“এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আওয়ামী লীগ তার অফিসের সামনে সভা-সমাবশ করবে, তাদেরকে করতে দেবেন। আমাদেরকেও দিতে হবে। নইলে জনগণ রাজপথেই নামতে বাধ্য হবে।”

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কোভিড হেলপ সেন্টার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী বক্তব্য দেন।